মনিরুজ্জামান জুলেট, উপকূলীয় প্রতিনিধি : ইসলামিক রিলিফের সহায়তায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কালঞ্চি খাল পুনঃখননের উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে (২৯ এপ্রিল) শ্যামনগর উপজেলার কালিনচি খাল পুনঃখননের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষ। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. রনি খাতুন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিরাজ হোসেন খান, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তালহা জামাল, প্রোগ্রাম বিভাগের প্রধান এনামুল হক, রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ এবং খাল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিনিধিরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততার বিস্তার, পানি সংকট এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাসের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা শ্যামনগর উপজেলায় এ খাল পুনঃখনন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৩০০ ফুট, ওপরে প্রস্থ ৬১ ফুট এবং নিচে ৪০ ফুট। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে কমিউনিটি পরামর্শের মাধ্যমে প্রকল্পটি চিহ্নিত হয় এবং পরবর্তীতে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (LAPA) ও কমিউনিটি ঝুঁকি মূল্যায়ন (CRA) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন লাভ করে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং স্থানীয় জনগণ প্রায় ৩ লাখ টাকা অবদান রাখছে কাঠের সেতু নির্মাণের জন্য।
উন্নয়ন সংস্থা, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই প্রকল্পকে টেকসই, কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজনের একটি অনন্য মডেলে পরিণত করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তালহা জামাল বলেন, “আজকের উদ্বোধন কেবল একটি খাল পুনঃখননের নয়; এটি শ্যামনগরের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী করে তুলবে। আমরা তাদের পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।”
ইউএনও মোছা. রনি খাতুন বলেন, “কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংস্থার কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তার সমন্বয়ে বাস্তব পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এ উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের চাহিদার প্রতিফলন।”
নতুনভাবে পুনঃখননকৃত খালটি বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করবে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উন্নয়নে সহায়তা করবে এবং খরার সময় সেচের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। একইসঙ্গে খালটি লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে এবং পানি ব্যবস্থাপনায় টেকসই সমাধান প্রদান করবে। এছাড়া, খালের ওপর নির্মিতব্য কাঠের সেতু দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ ও যাতায়াত সহজ করবে।