নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকালকার দিনে টিকে থাকার প্রতিযোগীতায় মার্কটিং একটি চ্যালেনজিং বিষয়। হ্যা সেই চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে নেছারাবাদ উপজেলার হাট-বাজারের দোকানে দোকানে নিজ হাতে তৈরী খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন পারভীন বেগম(৩৫) নামে এক সংগ্রামী নারী। গ্রামের পুরুষ শাসিত সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পারভীন বেগম প্রতিদিন সূর্যদয়ের সাথে সাথে দু’হাতে দুইটি ব্যাগ বোঝাই পন্য নিয়ে ছুটছেন দোকানে দোকানে। ব্যাগে থাকছে তার নিজ হাতে তৈরী মুখরোচক চাল ভাজা,চিড়া ভাজা, ডাল ও বাদাম। সংগ্রামী এই নারীর গ্রামের বাড়ী বানারীপাড়া উপজেলার কচুয়া গ্রামে। আগে সপ্তাহের প্রতিদিন তিনি ঘুরে ঘুরে নেছারাবাদ উপজেলার হাটবাজারে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের ছোট খাট টং দোকানে মাল দিতেন। তবে এখন কিছুটা শারীরিক অসুস্থতায় সপ্তাহের তিনদিন মাল দিতে আসেন এ উপজেলায়। পারভীন বেগমের হাতে তৈরী চাল ভাজা ও চিড়া ভাজা খুবই লোভনীয় খাবার। তেল মাখানো চালভাজার মধ্য রয়েছে চানাচুর,রসুন ও বাদাম মিশানো। তাই বাজারে চাহিদাও বেশ। তবে তিনি জানান মূলধন সল্পতায় বাজারের চাহিদানুযায়ি চালভাজা ও চিড়াভাজা মার্কেটিং করতে পারছেন না দুই সন্তানের জননী এই পারভীন বেগম।
কর্মঠ এই নারীর এই পেশায় আসার কারন জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলেন, সংসারে দারিদ্রতার কারনে বিয়ের আগে শহরে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। তখন দেখেছি নারীরাও পারে। দুই বছর হল স্বামীকে রেখে সন্তান নিয়ে চলে এসেছি। ঘরে অসুস্থ মা। তাই সংসারের হাল ধরতে নিজের বুদ্ধিগুনে এই পেশায় এসেছি।
সারাদিন বিক্রি শেষে কেমন উপার্জন হয় জানতে চাইলে পারভীন বেগম বলেন, আমার কোন হিসাব নেই। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বয়স আঠার আর ছেলের আট। মা খুব অসুস্থ। নিজের শরীরটাও ভাল যাচ্ছেনা। তবে মার্কেটে যেতে পারলে সুন্দরভাবে সংসার চলে যায়। আগে একজন লোক রেখেছিলাম। করোনাকালীন ব্যবসা মন্দায় ঠিকমত বেতন দেতি পারিনি। তাই এখন লোক নেই। এখন সপ্তাহে তিনদিন মাল বানাই। তিনদিন মার্কেটে আসি। মূলধন সংকটে বাজারের চাহিদানুযায়ি চালভাজা দিতে পারছিনা।
সংগ্রামী এই নারী বলেন, লকডাউনের কারনে ঋণের বেড়াজালেও আটকে গেছি। তিনি বলেন, করোনায় লক ডাউনে অনেক দিন বসে বসে খাওয়ায় কিছু টাকা ঋণ হয়ে গেছে। তাই একদিকে ঋনের ভোজা অন্যদিকে চালান সংকট। সমস্যা কাটাতে পারলে আবারও ব্যবসায় এগিয়ে যাবো বলে আশাবাদি এই নারী।
এই কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পারভীন আরো বলেন, নেছারাবাদ উপজেলার অনেক দোকানদার তার কাছ থেকে মাল রাখেন এবং নারী বলে অনেকে এ কাজে তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন তবে অনেক মানুষ অনেক রকম কথা বলে এসবকে কানে দেই না। চাইলে মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারতাম। সেটা না করে আমি নিজের কাজ করে খাচ্ছি। আমি চাইলে সহজে বিভিন্ন পথে গিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারতাম কিন্তু তা কখনো করিনি। আমি চাই না আমার ছেলে মেয়ের জীবন যেন আমার মতো না হয়।