ভারতের চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদটি নতুন। যার ফলে তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত বিপিন রাওয়াতের পদপদবীর পরিচিতি নিয়ে অস্পষ্টতা কমবেশি অনেকের মধ্যেই রয়েছে।
সিডিএস এর পুরো অর্থ কিঃ এর পুরো অর্থ চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। সর্ট ফর্মেট হলো সিডিএস।
২০১৯ সালে ভারত সরকার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পরিষেবাকে একীভূত করতে এই পদটি তৈরি করে। এরপর ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান বিপিন রাওয়াতকে এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিং সোহাগ অবসর গ্রহণ করেন ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর বিপিন রাওয়াতকে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ২৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয় ভারত সরকার।
ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ এবং জেনারেল দলবীর সিং সোহাগের পর বিপিন রাওয়াত গোর্খা ব্রিগেডের তৃতীয় সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে সেনাপ্রধান হন।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা যেভাবে ঘটেঃ বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ নাগাদ তামিলনাডুর কোয়েম্বাটোর ও সুলুরের মাঝে নীলগিরি চা বাগানে ভেঙে পড়ে বিপিন রাওয়াতকে বহনকারী ভারতীয় বায়ুসেনার এমআই ১৭ভি৫ হেলিকপ্টার। ভেঙে পড়ার পর তাতে আগুন ধরে যায়। তারা সুলুর থেকে ওয়েলিংটনে যাচ্ছিলেন।
ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত, ব্রিগেডিয়ার এলএস লিড্ডার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হরজিন্দর সিং, নায়েক গুরসেবক সিং, নায়েক জিতেন্দ্র কুমার, ল্যান্স নায়েক বিবেক কুমার, ল্যান্স নায়েক বি সাই তেজা, হাবিলদার সতপাল সহ মোট ১৪ জন।
বুধবার ভারতীয় সেনার এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – ডিফেন্স স্টাফ কলেজ একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিপিন রাওয়াত। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর ৫ মিনিটি আগে ১২.২০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতেই তার বর্নাঢ্য জীবনের মর্মান্তিক সমাপ্তি হয়।
বিপিন রাওয়াতের ক্যারিয়ারঃ বিপিন রাওয়াত উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে ১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ
জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াত ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন। মা ছিলেন উত্তরকাশীর প্রাক্তন বিধায়ক কিষাণ সিং পারমারের মেয়ে।
তিনি দেরাদুনের ক্যামব্রিয়ান হিল স্কুল এবং সিমলার সেন্ট এডওয়ার্ডসে স্কুলজীবন শেষ করেন। এরপর তিনি খাদাকওয়াসলার জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি এবং দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। সেখানে তাকে ‘সোর্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।
বিপিন রাওয়াত ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ (ডিএসএসসি) থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি কমান্ড এবং কানসাসের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থের জেনারেল স্টাফ কলেজে উচ্চতর কমান্ড কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি ডিফেন্স স্টাডিজে এমফিল ডিগ্রির পাশাপাশি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট এবং কম্পিউটার স্টাডিজে ডিপ্লোমা করেছেন।

সেনা জীবনঃ বিপিন রাওয়াত ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ১১-গোর্খা রাইফেলসের ৫ম ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। একই ইউনিটে তার বাবাও ছিলেন। মেজর হিসেবে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে একটি কোম্পানির কমান্ডের নেতৃত্ব দেন। কর্নেল হিসেবে তিনি কিবিথুতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরে ৫ম ব্যাটালিয়ন ১১-গোর্খা রাইফেলসের নেতৃত্ব দেন। ব্রিগেডিয়ার হিসেবে তিনি সুপুরে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ৫-সেক্টরের নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (মনুসকো) সপ্তম চ্যাপ্টার মিশনে বহুজাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি দু’বার ফোর্স কমান্ডারের প্রশংসায় ভূষিত হন।
মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতির পর রাওয়াত ১৯তম পদাতিক ডিবিশনের (উরি) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে তিনি পুনেতে দক্ষিণ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে ডিমাপুরে সদর দপ্তর তৃতীয় কোরের নেতৃত্ব দেন।
এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময় স্টাফ অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরমধ্যে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে (দেরাদুন) ইন্সট্রাকশনাল টেনার, মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড-২, কেন্দ্রীয় ভারতের রি-অরগানাইসড আর্মি প্লেইনস ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের (আরএপিআইডি) লজিস্টিক স্টাফ অফিসার, মিলেটারি সেকরেটারিস ব্রাঞ্চের কর্নেল মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি, জুনিয়র কমান্ড উইং-এর সিনিয়র ইন্সট্রাক্টরসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের মেজর জেনারেল জেনারেল স্টাফ (এমজিজিএস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আর্মি কমান্ডার গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পর রাওয়াত ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ (জিওসি-ইন-সি) সাউদার্ন কমান্ডের পদ গ্রহণ করেন। সেখানে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফের পদ গ্রহণ করেন।
সম্মাননা ও পুরস্কার
মিলিটারি-মিডিয়া অধ্যয়নের ওপর গবেষণার জন্য চৌধুরী চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয় বিপিন রাওয়াতকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি তাকে ‘সোর্ড অফ অনার’ পুরস্কারে ভূষিত করেছিল।
এছাড়াও, তিনি পরম বিশিষ্ট সেবা পদক, উত্তম যুদ্ধ সেবা পদক (ইউওয়াইএসএম), অতি বিশিষ্ট সেবা পদক (এভিএসএম), যুদ্ধ সেবা পদক (ওয়াইএসএম), সেনা পদক, বিশিষ্ট সেবা পদক (ভিএসএম) ইত্যাদি পুরস্কারে পেয়েছেন।

Discussion about this post