Print Date & Time : 15 May 2025 Thursday 4:33 pm

সম্মাননা পদক পেলেন মুজাহিদ প্রিন্স

নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্মাননা পদক পেলেন নাট্যজন মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্স।

শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়তে নিরন্তর কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রতিবছর নানা বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য গুনীজনদের ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা’প্রদান করে আসছে। এ বছরেও (২০১৮-২০২২) সর্বমোট ২৫ জন গুনীজনকে সম্মাননা প্রদান করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে জেলা কালচারাল অফিসার কাজী মোঃ কামরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ নূর কুতুবুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জী।

নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য নাট্যকলা বিভাগে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্মাননা পদক পেলেন নাট্যজন মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্স। সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নাট্যজন মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্সের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার কাজী মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরেই আমরা নানা বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য গুনীজনদের সম্মাননা প্রদান করে থাকি। এবছরেও তারই ধারাবাহিকতায় আমরা গত পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২২) ২৫ জন গুনীজনকে সম্মাননা প্রদান করেছি। নাট্যকলা বিভাগে নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য নাট্যজন মুজাহিদ প্রিন্সকে সম্মাননা পদক প্রদান করতে পেরে আমরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি গর্বিত। তার অনন্য প্রতিভায় ও সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ হবে আমাদের পটুয়াখালীর নাট্যাঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাংস্কৃতিক সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্ত বলেন, প্রিন্স আমার সন্তানের মতো। প্রিন্সকে যখন আমি হাত ধরে ড্রামাটিক ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলাম তখনি বুঝেছিলাম এই ছেলে একদিন পটুয়াখালীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের হাল ধরবে। ঠিক তাই হয়েছে৷ প্রিন্সের এই সফলতায় এই সম্মাননা প্রাপ্তিতে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। আমাদের পটুয়াখালীর থিয়েটারের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রিন্স ও তার দল ‘সুন্দরম’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রিন্সের বিচক্ষণ দক্ষতায় প্রসারিত হোক পটুয়াখালীর নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

নাট্যজন প্রফেসর এম. নুরুল ইসলাম বলেন, প্রিন্সের দূরদর্শী পরিকল্পনা, দায়িত্বশীলতা ও সৃজনশীল মেধা শক্তির জন্যে আজ পটুয়াখালীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেকটাই মসৃন ও প্রশংসনীয়। সাংস্কৃতিক কর্মীদের অধিকার আদায়ে প্রিন্সের কন্ঠস্বর সর্বদাই বলিষ্ঠ ভুমিকায় ছিলো৷

নাট্যজন মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, এই সম্মাননা পদক আমাকে আরও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেছে। মফস্বলে নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে আমার দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিলো এই পদক। পটুয়াখালীতে থিয়েটারের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমি ও আমার দল ‘সুন্দরম’ কাজ করে যাচ্ছি। আমাকে নাটকে বিশেষ অবদানের জন্যে সম্মাননা পদক প্রদান করায় আমি জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই।

○নাট্যজন মুজাহিদ প্রিন্সের জীবনকথাঃ

নাট্যজন মুজাহিদুল ইসলাম প্রিন্স ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮০ সালে পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার উত্তর মুরাদিয়া গ্রামে নানা বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- মোঃ আবদুর রব মিয়া, মাতা- মৃত নুরুন্নাহার লুচী। শিক্ষক বাবার চাকুরীর সুবাদে লেখাপরা শুরু সেহাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৯৫ সালে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং একই কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি সবসময়ই নিজেকে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

তাঁর মঞ্চ জীবনের প্রথম নাটক ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’। স্কুল জীবনে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তাঁর পরিচয় ঘটে সাংস্কৃতিক সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্তের সাথে। বাবার অমতে তিনি প্রিন্সকে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন পটুয়াখালী ড্রামাটিক নাটকের মহড়ায় নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেন। সেখান থেকেই তিনি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে পড়েন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে।

উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় দখিনা খেলাঘর আসরের সংগঠক ড. আমিনুল ইসলাম টিটো তাঁকে যুক্ত করেন খেলাঘর আন্দোলনে। ড. আমিনুল ইসলাম টিটোর মাধ্যমে পরিচয় ঘটে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষক সাবেক অধ্যক্ষ নাট্যজন প্রফেসর এম নুরুল ইসলাম এর সাথে।

১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার রজত-জয়ন্তীতে নাট্যজন ফরিদুজ্জামান খানের উদ্যোগে ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালীর অন্যতম প্রধান সংগঠন ‘সুন্দরম নাট্য মঞ্চ’। সুন্দরমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সংগঠনের প্রথম প্রযোজনা ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ’এ অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে শক্ত ভীত গড়তে সামর্থ হন তিনি। পরবর্তীতে নন্দন ও সুন্দরমের সকল প্রযোজনায় মঞ্চে তাঁর সাবলীল উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নিজেকে একজন নাট্যকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

○২০০০ সালে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) নৌ শাখার ক্যাডেট আন্ডার অফিসার (সিইউও) হিসেবে জাতীয় প্যারেড শেষে বিএনসিসি’র ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে একা ১৮ মিনিটের পারফরম্যান্স করেন।

২০০৩ সালে ৬ আগষ্ট বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় শিশুদের নাট্যচর্চায় সম্পৃক্ত করতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুন্দরম চিলড্রেনস থিয়েটার’। ২০০৫ সালে সুন্দরম চিলড্রেনস থিয়েটার পিপলস থিয়েটার আয়োজিত ৬ষ্ঠ জাতীয় শিশু-কিশোর নাট্যউৎসবে বরিশাল বিভাগের প্রথম ও একমাত্র দল হিসেবে তাঁর রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘দন্তস্য উন্দুর’ ঢাকায় মঞ্চস্থ করেন। তাঁর লেখা একাধিক নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারচিত হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ১০ টির অধিক মঞ্চ নাটক লিখেছেন৷

তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’এই স্লোগানকে সামনে রেখে খেলাঘর আন্দোলনকে বেগবান করতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পটুয়া খেলাঘর আসর’।

২০০২ সালে তাঁর লেখা প্রথম গ্রন্থ ‘বৃত্তের বাইরে’প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে একুশে বইমেলায় তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস পটুয়াখালী জেলা’প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা প্রবন্ধ ‘পটুয়াখালী জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি ’

২০০৭ সালে এলএলবি পাশ করলেও আইনজীবী না হয়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতাকে। প্রকাশনার শুরু থেকে দৈনিক আমাদের সময়ের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত তিনি। এছাড়া একুশে টেলিভিশন ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন। তার সম্পাদনায় পটুয়াখালীর প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল কোষ্টাল নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। উন্নয়ন সাংবাদিকতার জন্য তিনি ২০০০ সালে পেয়েছেন ‘প্রকৃতজন’পুরষ্কার।

○বর্তমানে তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্য প্রশিক্ষক ও জেলা শিশু একাডেমির আবৃত্তি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, খেলাঘরের জাতীয় পরিষদের সদস্য,বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সুন্দরমের সাধারণ সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী আবৃত্তি মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের ১নং সহ-সভাপতি সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//