ওপেলিয়া কনি, দেশতথ্য রিপোর্টঃ
সরকারি নিয়মকে অমান্য করে নিয়মবহির্ভূতভাবে একই সাথে দুইটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক হিসেবে চাকুরী করছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস এম নাজিম উদ্দিন। একদিকে প্রতিদিন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত অন্যদিকে কুষ্টিয়ার বটতৈলে অবস্থিত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে সম্মানী গ্রহণ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে কাগজে কলমে দায়িত্বে থাকলেও মাসের পর মাস তার পদচারণা পড়ে না সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে। যার ফলে সেখানকার নিবাসীদের চিকিৎসার জন্য ইজিবাইক ও বিভিন্ন যানবাহন যোগে অসুস্থ থাকা অবস্থায় যেতে হচ্ছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
সুত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়া সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পান এস এম নাজিম উদ্দিন। খন্ডকালীন চিকিৎসকদের দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে এক -দুইদিন রোগী দেখতে সেখানে যেতেন তিনি। এর কয়েক বছর পর হঠাৎ তিনি সেখান থেকে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশের বাইরে চলে যান। তারপর তিনি আবার ডিগ্রি অর্জন শেষে চাকরিটা পুনর্বহাল করার জন্য আবেদন দেন। তৎকালীন সময়ের সমাজসেবার কর্মকর্তাদের সাথে ডাক্তার নাজিম উদ্দিনের ভালো সখ্যতার কারনে তিনি পুনরায় চাকরীটা নিয়মিত করিয়ে নেন। এর পর কয়েক বছর তিনি সপ্তাহে এক-দুইদিন সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্র নিবাসীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য গেলেও এখন প্রায় বেশ কয়েক বছর তিনি সেখানে নিয়মিত যান না। কারন তিনি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বিসিএস (স্বাস্থ্য) ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছেন। যার ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা মেয়ে নিবাসীরা। সরকারি নথিপত্রে তাদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাঃ নিয়োগ থাকলেও চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, একই সাথে দুইটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করা ডাক্তার এস এম নাজিম উদ্দিন একটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা প্রদান না করেই এক জায়গা থেকে সরকারি বেতন নিচ্ছেন এবং আরেক জায়গা থেকে প্রতিমাসে নিচ্ছেন সম্মানীভাতা । মাসের পর মাস ডাক্তার নাজিম উদ্দিনের পদচারণা সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে না পড়লেও সম্মানীভাতার টাকার চেক তিনি ঠিকই তুলছেন। যেটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুত।
এ ব্যাপারে ডাঃ এস এম নাজিম উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্বরত আছি এবং খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে কুষ্টিয়া সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে রয়েছি। আমার বিসিএস দেওয়ার আগে থেকেই আমি সেখানে খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে আছি। আমি সেখানে নিয়মিত যায়না বেশি প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। আর আমার তো দুই জায়গায় বেতন দেয় না এক জায়গা থেকে আমি বেতন পায় আর অন্য জায়গা থেকে আমাকে সম্মানী দেয়া হয়।”
বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের ম্যানেজার ড.নাজনীন নাহারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “ডাঃ এস এম নাজিম উদ্দিন আমাদের এখানে প্রায় ২০০৩ সাল থেকে খন্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন আর আমাদের এখান থেকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু টাকা উনাকে সম্মানীভাতা হিসেবে দেওয়া হয় । তবে উনি বর্তমানে আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার কারনে এখানে নিয়মিত আসেন না , যার ফলে এখানকার মেয়ে নিবাসীদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ ব্যহত হচ্ছে এবং এরা অসুস্থ হলে তাদেরকে অটোরিকশা যোগে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন মো: আকুল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি জানান, “সরকারি চাকরি করাকালীন অন্য কোথাও সেকেন্ড চাকরি করা যায় না আর যদি সেটা আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তবে তা নিশ্চিত ভাবে বৈধ নয়। “
তারপরও বহুবছর ধরে সরকারি চাকরির এই নিয়মকে কোনোরকম তোয়াক্কা না করে ডাঃ নাজিম উদ্দীন কিভাবে একই সাথে দুটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব প্রাপ্ত রয়েছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, “বিষয়টি নিয়ে ডাঃ নাজিম উদ্দীনের সাথে কথা হয়েছে, আসলে উনি অনেক আগে থেকেই সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে দ্বায়িত্বে ছিলেন তবে বর্তমানে উনি ওখানে আর যান না। আর ওই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হলেও উনাকে সম্মানী হিসেবে সামান্য কিছু দেয় তাই এটা তেমন সিরিয়াস কিছু না। তারপরও আপনারা এটা নিয়ে লেখালেখি করলে হয়তবা উনি আর কখনোই ওখানে যাবেন না, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এতে উনার তেমন কিছুই যাবে আসবে না। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে যে সম্মানীটা দেয়া হয় তা ধরতে গেলে অনেক কিছু আর না ধরলে কিছুই না।”
তবে কি সরকারি নিয়মগুলো শুধু নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ! বহুবছর ধরে সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একই সাথে দুইটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বিসিএস(স্বাস্থ্য) ডাঃ এস এম নাজিম উদ্দিন।

Discussion about this post