খুব বেশি দূরে নয়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে রাজবাড়ী রোডে গেলে মাত্র ১৭০ কি.মি.। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে গেলে ২২০ কি.মি। কমলাপুর থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া যেতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগে। আবার ঢাকা থেকে প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থাও আছে। এই প্যাকেজ ট্যুরে মাত্র ৬০০০/ টাকায় ৩ রাত দুই দিনে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের দর্শনীয় স্থান গুলো দেখে আসার ব্যবস্থা আছে। এই খরচেই মিলবে যাওয়া আসা থাকা খাওয়া এবং দেখা।
প্যাকেজ ট্যুরে যা দেখবেনঃ রবি ঠাকুরের কুঠি বাড়ি, কাঙ্গাল হরিনাথের প্রেস, মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, লালন শাহের আস্তানা, মোহিনী মিল, টেগর লজ, হাডিঞ্জ ব্রিজ, পাউয়ার হাউজ, জমিদারদের ঘরবাড়ি, প্যারি সুন্দরীর ভিটা, রাধাবিনোদ পালের পুকুর, আমঝুপির নীলকুঠি, মুজিবনগরের আম্রকানন।
রাস্তায় কিনতে পারবেন ফরমালিন মুক্ত ফলমূল শাক সব্জি, মাঠে চরা রাজহাঁস, ব্লাকবেঙ্গল গোট, কুমারখালীর তোয়ালে, বেডসিট, নক্সিকাঁথা, সেঁউড়িয়ার তিলেখাজা, রমেশ দধি ভাণ্ডারের রসোমালাই, প্যাড়া সন্দেশ, ব্যাধ সম্প্রদায়ের তৈরি কুঠির শিল্পের নানা সামগ্রী ও নক্সী কাঁথা।
এছাড়াও কুঠিবাড়ির বকুল তলার পুকুর পাড়ে বসে স্থানীয় শিল্পিদের কণ্ঠে শুনবেন রবিন্দ্র সংগীত, লালন আঁখড়ায় লালন সংগীত, মিরপুরের মিনি রিসোর্ট পার্কে উপজাতি ও স্থানীয় শিল্পিদের গান।
আরো থাকবে, অটোতে চড়ে গ্রাম ভ্রমণ, নিজ হাতে মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা।
কিভাবে যাবেনঃ এই ভ্রমনে যেতে হলে ট্যুরিস্ট গাইড বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বারে বা ঠিকানায় এসে ২০০ টাকা দিয়ে বুকিং নিতে হবে। অবশিষ্ট টাকা ভ্রমণের দিন গাড়িতে উঠার আগে দিতে হবে।
যেভাবে যাওয়া হবেঃ কাকরাইল থেকে এসি বাসে কুষ্টিয়া। এসি গাড়িতে শিলাইদহের কুঠিবাড়ি, সেখান থেকে কুমারখালি হয়ে মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, ছেঁউড়িয়ায় লালন আঁখড়াসহ অন্যান্য স্থাপনা দেখে মিরপুরের মিনি রিসোর্ট & পার্কে রাত্রিযাপন।
পরদিন সকালে এসি গাড়িতে আমলা ও মেহেরপুর হয়ে মুজিবনগর। ফেরার পথে আমঝুপির নীলকুঠি দেখে রিসোর্টে প্রত্যাবর্তন। রাতে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা।
ঢাকার ঠিকানাঃ খাজা মোহাম্মদ সিন্ধু আবেদ। ট্যুরিস্ট গাইড বাংলাদেশ। বাড়ি নং ৮০/৫, ভিআইপি রোড। করাইল মোড়, ঢাকা।
মোবাইলঃ 01624811635/01710862632.
https://youtu.be/bofVl0HMBf4
কুষ্টিয়া অফিসের ঠিকানাঃ
মিনি রিসোর্ট & পার্ক। বাড়ি নং ১৫৯, ওয়ার্ড-০৪। (গ্রাম মিরপুর তালতলা) মিরপুর পৌর এলাকা, কুষ্টিয়া। মোবাইলঃ 01624811635/01710862632.
এই ব্যবস্থার বাইরে যারা কুষ্টিয়া ভ্রমণে যেতে চান তাদের জন্য দেওয়া হলো তথ্যসহ পথ নির্দশনা।
কুষ্টিয়া তথ্যঃ কুষ্টিয়া বহুপূর্ব থেকেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি। এর নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে। হেমিলটনস-এর গেজেটিয়ার সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় ‘কোষ্টা’ বা ‘কুষ্টি’ বলতো। এই থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি বলেও একটি মত রয়েছে।
জেলার গঠনের ইতিহাস: ১৭২৫ সালে এই জেলাটি নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল। ১৭৭৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কুষ্টিয়াকে যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত করে। ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অর্ন্তগত হয়। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া , চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর নামের তিনটি মহকুমা নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহকুমাকে আলাদা জেলা হিসেবে গঠন করা হয়। এরপর কুষ্টিয়া মহকুমার ৬ টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।
মানচিত্রে কুষ্টিয়া:
এই জেলার উত্তর পশ্চিমে পদ্মা নদী। এই নদীর অপর তীরে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা। দক্ষিণে ঝিনাইদহ জেলা। পশ্চিমে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা। পূর্বে রাজবাড়ী জেলা অবস্থিত। ভারতের সাথে কুষ্টিয়ার ৪৬.৬৯ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা আছে।
দর্শনীয় স্থান সমুহ:
০১. রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি (শিলাইদহ): এই স্থানটি কুমারখালী উপজেলায় আবস্থিত। জেলা শহর হতে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। কুষ্টিয়া শহর থেকে অটো রিক্সা, সিএনজি ও ইজি বাইক ও রাজবাড়ী গামী বাসে উঠে আলাউদ্দিন নগরে নামতে হবে। অটো বা ভ্যানে উঠে ৪ কিলোমিটার দুরের শিলাইদহ কুটি বাড়ি যাওয়া যায়। সেখানে সরকারী ডাকবাংলো ও বেসরকারী গেষ্টহাউজ আছে।
০২. ফকির লালন সাঁইজির মাজার (কুষ্টিয়া সদর)ঃ জেলা শহরের সাথেই এর অবস্থান। বিকশাতে বা অটোতে উঠে দিন বা সন্ধ্যার পর যেতে পারেন। সেখানে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজন মনে করলে রাতে থেকে গানবাজনা উপভোগ করতে পারেন।
০৩. মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা। শহর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দুরের লাহিনীপাড়ায় এর অবস্থান। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের লাহিনীতে নেমে এক কিলোমিটার দুরে এই বাড়িটি।
০৪. ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ। কুষ্টিয়া-ঝিনেদা সড়কের বৃত্তিপাড়া বাজারে নেমে রিকশা ভ্যান বা অটোতে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে যাওয়া যায়। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে এই মসজিদের অবস্থান।
০৫. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া-ঝিনেদা সড়কের শেখ পাড়ার আগেই প্রধান সড়কের সাথে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
০৬. হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ভেড়ামারা উপজেলার সিমানায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদি সড়কে এর অবস্থান। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
০৭. পদ্মা নদীর উপর লালন শাহ সেতু ও হাড়িঞ্জ ব্রিজ পাশাপাশি অবস্থিত।
০৮. মোহিনী মিল। কুষ্টিয়া জেলা শহরের মধ্যেই এই মিল অবস্থিত।
০৯. রেইনউইক বাঁধ । জেলা শহরের মধ্যে গড়াই নদীর তীরে এই বাঁধের অবস্থান।
১০. টেগর লজ (মিলপাড়া)। জেলা শহরের মধ্যে বড়বাজার রেল স্টেশানের সাথেই এই লজ। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বা তাঁর পরিবারের লোকেরা কলকাতা থেকে এসে এই লজে উঠতেন। পরদিন সকালে গড়াই নদী পার হয়ে পালকীতে করে কুঠিবাড়ি যেতেন।
ভ্রশণ সহায়ক পরামর্শ: শহরের ডিসি কোটের সামনে থেকে কার বা মাইক্রো ভাড়া বা মজমপুর গেট থেকে অটো নিয়ে যাবেন গড়াই নদীর বাঁধে। এটার নামই রেণউইক বাঁধ। নদীর শীতল হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে নিবেন। এরপর বড়বাজার রেল স্টেশান সংলগ্ন টেগুর লজ দেখবেন।
এরপর যাবেন ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের আঁখড়ায়। সেখানে বাউলদের গান শুনে মিউজিয়াম দেখে লালন শাহের মাজার দেখে রওনা হবেন শিলাইদহের কুঠিবাড়ি উদ্দেশ্যে। হাতে সময় থাকলে লাহীনি পাড়ায় মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তভিটা দেখে নিতে পারেন। সেখানে একটি সাধারণ মানের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। সময় থাকলে যাবেন না থাকলে না। এরপর সড়ক পথে গড়াই নদী পার হয়ে যাবেন রবীন্দ্র নাথের কুঠিবাড়ি। কুঠিবাড়ি ভ্রমণ শেষে হাতে সময় থাকলে যাবেন কুমারখালী শহরে। সেখানে কাঙাল হরিনাথের জাদুঘর দেখে যাবেন কাপড়ের বাজারে। বুলবুল টেক্সটাইল মিলস সহ অন্যান্য খ্যাতনামা মিলের শো রুম থেকে সুলভ মুল্যে তোয়ালে গামছা বিছানার চাদর সহ মনমত বস্ত্র কিনে ফিরতে পারেন জেলা শহরে।
তথ্য সহযোগীতা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের কুষ্টিয়া অফিস।