Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 4:01 pm

সাউথ চট্টগ্রাম হাসপাতাল মেডিকেল বর্জ্য ফেলছে খালে!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ


চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার সাউথ চট্টগ্রাম হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড রাতের আধারে তাঁদের মেডিকেল বর্জ্যগুলো ড্রামে ভরে শিকলবাহা খালে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবত তাঁদের হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্যগুলো খালে ঢেলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ফেলছে বলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ। 

অনুসন্ধানে এ অভিযোগের সত্যতাও মিলে। গত ১৯ মার্চ রাত ৯ টায় প্রতিবেদকের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে এমন দৃশ্যে। তাতে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ড্রামে করে হাসপাতালের সমস্ত বর্জ্য ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় তুলে সড়ক দিয়ে দূরে ভেল্লাপাড়া ব্রিজে যেতে। 

ওখানেই গিয়ে ব্রিজে রিকশা দাঁড় করিয়ে উপর থেকে ড্রামের সব বর্জ্য সরাসরি খালে ছুঁড়ার দৃশ্যও ক্যামেরা বন্দি হয়। যেখানে একের পর এক ড্রামের বর্জ্য ফেলছে খালে। 
পরে ড্রাম খালি করে ফিরে আসে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। খালে ফেলা বর্জ্যগুলোতে সংক্রামক, প্যাথলজিক্যাল, অ্যানাটমিক্যাল, ধারালো, রাসায়নিক, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যসহ উচ্চচাপের পাত্র রয়েছে বলেও ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

অথচ মেডিকেল বর্জ্য বিধি ২০০৮’-এ বলা আছে, চিকিৎসা বর্জ্যগুলো উৎসেই পৃথকীকরণ, পরিবহনের জন্য চিকিৎসা বর্জ্য প্যাকেটের ওপর প্রতীক ব্যবহার, উপযুক্ত দহনযন্ত্র ব্যবহার, পচনশীল দ্রব্য মাটিতে পুঁতে ফেলাসহ বর্জ্য ফেলার জন্য বিশেষ কালারের রঙ দেয়া পাত্র ব্যবহার করা। এছাড়া ওই বিধিতে হাসপাতাল বর্জ্য পৃথকীকরণের জন্য পাত্রের বৈশিষ্ট্য, যন্ত্র চালানোর জন্য মান, নির্গমন ও নিঃসরণ মান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। 

কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী সাউথ চট্টগ্রাম হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করছে না। স্থানীয়রা জানান, উপযুক্ত তত্ত্বাবধান ও মনিটরিংয়ের অভাবে হাসপাতালগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। কিন্তু নীরব অবস্থানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্ণফুলীর সাউথ চট্টগ্রাম হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিঃ হাসপাতালসহ উপজেলার একাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করা কোন সেবা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। ফলে, কর্ণফুলীর হাসপাতাল গুলো খোলা জায়গায় মেডিকেল বর্জ্য ফেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলছে। প্রশ্ন রয়েছে হাসপাতালগুলোর অনুমোদন নিয়েও।

হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ করে অপারেশন করার পর শরীরের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অংশ ও সিজারের অংশগুলো ডাস্টবিনে ফেলা হয়। যেকোনো ময়লার গাড়ি আসলে তাড়াতাড়ি সেখানে ফেলে দেওয়া হয়। পরে খালে ফেলেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, মেডিকেল হাসপাতালের বর্জ্য স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এসব বর্জ্য পানি ও বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। এতে মানুষের শরীরে প্রাণঘাতী রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি বাড়ছে।

জানতে চাইলে সাউথ চট্টগ্রাম হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এগুলো গর্ত করে পুঁতে ফেলার জন্য যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে দায়িত্ব অবহেলা করেছে। বিষয়টির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। 

কর্ণফুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম নওশেদ মোর্শেদ বলেন, বিষয়টি আমরা এখনো অবগত না। এই মূহুর্তে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারতেছি না। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক উর্মি সরকার বলেন, আমি কর্ণফুলী উপজেলার নতুন দায়িত্বে পেয়েছি সবেমাত্র। গতকাল চিঠি পেলাম। হাসপাতাল ভিজিট করে পরে মন্তব্য করব।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//২১ মার্চ ২০২৪//