Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 9:40 am

সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার আহ্বান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করা ও অপরাজনীতি না করার দাবি জানিয়েছে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।

বুধবার ( ২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা। এতে একমত পোষণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন। এর আগে সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, অপরাজনীতি বন্ধ ও শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান পরিবার।

আজ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. আ ন ম এরশাদ উল্লাহ, শাখা বৈবিছাআ এর সমন্বয়ক এস এম সুইট, ছাত্রদল আহ্বায়ক শাহেদ আহমেদ, ছাত্রশিবির সভাপতি মাহামুদুল হাসান, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি নূর আলম সিদ্দিকী, ছাত্র আন্দোলন সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, খেলাফত মজলিশ সভাপতি সাদেক আহমেদ সহ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

এসময় আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দিন মিঝি বলেন, “সাজিদের এমন মৃত্যুতে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি এবং পুলিশ প্রশাসন কাজ অব্যাহত রাখছে।” এছাড়া সাজিদের বাবার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কাজ করার কথা জানান।

তিনি আরও বলেন, “সাজিদের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে চোখ খুলে দিয়েছে। এই ঘটনার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আল কুরআন বিভাগ কাজ করে যাবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সকল দাবির সাথে একমত। তবে সকল কিছুর আগে এ ঘটনার তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য দাবিগুলো আদায় করতে গিয়ে মুখ্য বিষয় যেন হারিয়ে না যায়। এ বিষয় নিয়ে যেন কোনো ধরনের অপপ্রচার না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সকল শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে।” তার বক্তব্য শেষে এ সকল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো একমত পোষণ করে।

এর আগে, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় সাজিদের পরিবার ক্যাম্পাসে এসে তদন্ত কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, তদন্তে অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

তারা বলেন, “ক্যাম্পাসের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো। তারা এখানে পড়াশোনার জন্য এসেছে। সাজিদের এ মর্মান্তিক ঘটনায় সকলেই ব্যথিত। তারা সাজিদের মৃত্যুর কারণ জানতে ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু সাজিদের লাশ নিয়ে রাজনীতি করে ক্যাম্পাসে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হোক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক এবং সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুর তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে চলতে থাকুক।”

মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার, সাজিদের চাচা, ভগ্নিপতি, প্রতিবেশী, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি।

এদিকে সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গত সোমবার ( ২৩ জুলাই) আল কুরআন বিভাগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকল সংগঠন আলোচনায় বসে। তখন, পরেরদিন ডাকা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি বাতিল করে পরবর্তীতে সম্মিলিত ভাবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ ব্যাপারে সাজিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইনসানুল ইসলাম নুর একটি পোস্ট দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে, এ পোস্টটি তাকে জোর করে দেওয়ানো হয়েছে বলে ফেইসবুকে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়।

এ ব্যাপারে আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ইনসানুল ইসলাম নূর বলেন, “আমাকে সেদিন চাপ দিয়ে এগুলো করানো হয়নি বরং সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হওয়া সিদ্ধান্ত আমি নিজ ইচ্ছায় পোস্ট করেছি।সাজিদের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য আমরা সকলে একসাথে কাজ করব।”

উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬ টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। সাজিদ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ারের একমাত্র ছেলে। পরে সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় কমিটি। এদিকে এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ ও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুকুরে নামা নিষিদ্ধ করে মাইকিং করেছে প্রশাসন। এর আগে ১৯ জুলাই সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে টানা পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।