ইরফান উল্লাহ, ইবি :
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যার ইস্যুতে মামলা দায়ের ও সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেটের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ ।
সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এতে শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তালাবাসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়। এর আগে বেলা ১১ টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবন চত্বরে শেষ হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না’, ‘খুন কেন আমার ভাই, খুনিদের রক্ষা নাই’, ‘রশি লাগলে রশি নে, খুনিদের ফাঁসি দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা করেনি প্রশাসন। এখনো সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। তারা বিভিন্ন তালবাহানা করছে। আমরা চাই অবিলম্বে পিবিআই এর মাধ্যমে তদন্ত হোক। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। এই ক্যাম্পাসে আর যেন কোনো সাজিদ প্রাণ না হারায় তা প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সাজিদ হত্যার বিচার এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়বো না।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, আমরা আর কোনো টালবাহানা দেখতে চাচ্ছি না, ক্যাম্পাসে আর কোনো লাশ দেখতে চাচ্ছি না, মেয়েদের হলে ফুলপুরীর মতো আর কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার না হতে হয়, হলে হলে যেন মব সৃষ্টি না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, পিবিআই ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সাজিদ হত্যার খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা বিপ্লবের সাজিদ আব্দুল্লাহকে হারিয়েছি। জুলাই আন্দোলনের পর আমাদের নিরাপদ ক্যাম্পাস পাওয়ার কথা ছিল যে-প্রশাসন আমাদের আগলে রাখবে, সব দাবি পূরণ করবে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সে রকম প্রশাসন পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা দেখেছি প্রশাসন অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে। সিডিআই, পিবিআই উচ্চতর তদন্ত কমিটি দিয়ে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন যদি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা প্রশাসনকে আসসালামুআলাইকুম বলতে বাধ্য হবো।
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নূর আলম বলেন, আমরা সাজিদ হত্যার বিচার ছাড়া রুমে ফিরে যাবো না। যারা সাজিদের স্বপ্নকে ভঙ্গ করেছে, যারা সাজিদের পরিবারের স্বপ্নকে ভঙ্গ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করে আমরা মাঠ ছাড়ব না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি পিবিআইকে তদন্ত হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা জানতে চাই এই তদন্ত প্রক্রিয়া কী, কতদিন সময় লাগবে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক এস. এম সুইট বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাজিদ হত্যার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দিতে যাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, এই হস্তান্তর যেন আজকের মধ্যেই সম্পন্ন হয় এবং কালক্ষেপণ না করা হয়। তদন্ত শুরু হওয়ার পর পিবিআইকে নির্দিষ্ট সময় পরপর অগ্রগতির একটি রোডম্যাপ শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর আমরা আশঙ্কা করছি, আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বা জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা দাবি করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন প্রত্যেক আন্দোলনকর্মী, বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যদি প্রশাসন এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের উচিত হবে পদত্যাগ করা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাজিদের হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হবে। যেহেতু এটি হত্যাকাণ্ড তাই বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এছাড়া আজকের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক মামলা রুজু করা হবে। দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছি। আজ সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি।

Discussion about this post