Print Date & Time : 13 May 2025 Tuesday 6:02 pm

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আর নেই

বাংলাদেশে প্রথম প্রবর্তিত হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আজ সকাল (১৯ মার্চ,২২) সকালে ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকা সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

সাবেক প্রধানবিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ জেনারেল জিয়ার শাসন আমলে বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পতনের পর তাঁকে বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের ৬ষ্ট প্রধান বিচারপতি ও দুবার রাষ্টপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল এরশাদের পর ১৯৯০ সালের ৬ডিসেম্বর হতে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্হায়ী ভাবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেন।

তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় পেইম গ্রামে ১৯৩০ সালে ১৩ ফেব্রয়ারিতে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম তালুকদার রিসাত আহমেদ। তিনি কিশোরগঞ্জের আজিমউদ্দিন উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে গুরুদয়াল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ডে অধ্যায়ন করেন।
বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। তিনি তিনটি কন্যা ও দুটি পুত্র সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠা কন্যা ড. মিসেস সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন দ্বিতীয়া কন্যা মিসেস সামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার পুত্র শিবলী আহমেদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। আরেক পুত্র সোহেল আহমেদ কলেজ ছাত্র। সর্বকনিষ্ঠা কন্যা সামিয়া পারভীন চারুকলা কলেজের ছাত্রী।

শাহাবুদ্দিন আহমেদের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসাবে পদোন্নতি পান। এর পর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন হতে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়।

১৯৮০ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে তার প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়।

চাকুরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৮ম সংশোধনী সম্পর্কিত কেসে তার দেয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু লোক নিহত এবং অনেক লোক আহত হয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সেই ঘটনার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের রাজনীতিতে আসাটা কিছুটা নাটকীয়। ৫ ডিসেম্বর ১৯৯০, মওদুদ আহমেদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শূন্য রাষ্ট্রপতির পদে এবং নির্বাচন হবার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। এক দল অন্য দলের প্রার্থীর প্রতি অনাস্থা পোষণ করছিল।

অবশেষে যখন বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের নাম এলো,তখন দুটি দলই ঐকমত্য পোষণ করল যে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন-ই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ বাংলাদেশের ৫ম জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি আবার তার মূল পদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য //মার্চ ১৯, ২০২২//