সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও প্রধান আসামি একই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান এবং তার অনুসারী অস্ত্রধারী মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গতকাল শনিবার ভোরে নগরের বনকলাপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান (৪২), জুবের আহমদ (৩৮) এবং হাজীপাড়া এলাকার নুরুজ্জামানকে (৩৪) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার জুবের আহমদ ও নুরুজ্জামান মহড়ায় ছিলেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অস্ত্র হাতে মোটরসাইকেলে বসা আবুল কালাম আজাদকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ।
অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আফতাব হোসেন খানের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
তিনজনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ গত শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার সকালে বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার বাসার ফটকের সামনে আসেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাকে (আবদুল্লাহ) ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
শনিবার সিলেটে মতবিনিময়কালে সিইসির কাছে ওই অস্ত্র মহড়া ও আফতাবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এসময় তিনি বলেন, ঢাকায় গিয়ে কমিশন বসে তার প্রার্থীতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, তুহিন কাউন্সিলর আফতাবের অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে জায়গা দখল, বাসা-বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। র্যাব-পুলিশের হাতে কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। সর্বশেষ ওয়াকিটকি, বন্দুকসহ র্যাব ছাত্রলীগ নেতা তুহিনকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে গত মঙ্গলবার কাউন্সিলর আফতাব হোসেনর নেতৃত্বে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পর ছাত্রলীগ নেতা তুহিন এলাকায় অবস্থান করলেও বর্তমানে সে আত্মগোপনে রয়েছে। মহড়ার এই ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে নেতাদের পরামর্শে গ্রেপ্তার এড়াতে শুক্রবার সে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে পুলিশ বলছে তাকে গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযান চলছে। এজন্য একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আফতাব ঘুড়ি প্রতীক, সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ লাটিম প্রতীক ও মো. জাহিদ খান সায়েক ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার (১১ জুন) রাতে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) ও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে মামলা হয়েছে।
নৌকার মেয়র প্রার্থীর কর্মীকে মারধরের অভিযোগে এনে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. শাহানুর আলম বাদী হয়ে সাঈদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। আজ সোমবার (১২ জুন) মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার সুদীপ দাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১২ জুন ২০২৩

Discussion about this post