Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 8:38 pm

সিলেটের হাটখোলায় শহীদ পরিবারের সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সিলেট অফিস : সিলেটের জালালাবাদ থানার হাটখোলা ইউনিয়নের দখড়ি গ্রামে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আজমান আলীর পরিবারের এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে উত্তর সিলেটের বহুল আলোচিত চোর সম্রাট সাজিদ বাহিনীর সদস্যরা। নিহতের নাম তাজুল ইসলাম (৪০)।

 তিনি দখড়ি গ্রামের উস্তার আলীর পুত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে রোবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাজুল সহ পরিবারের চার সদস্যকে কুপিয়ে জগম করে সাজিদ বাহিনী। নিহত তাজুল মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আজমান আলীর আপন ভাতিজা। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় মামলা হয়েছে। বেপারোয়া সাজিদ বাহিনীর পুন:উত্তানে এলাকায় উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, উত্তর সিলেট তথা বৃহত্তর শিবের বাজার এলাকার ‘আলতা বাহিনী’ ও ‘সাজিদ বাহিনী’ নানা অপকর্মের কারনে একসময় বেশ আলোচিত ছিল। আলতা বাহিনীর প্রধান আলতা ও তার ছেলের মৃত্যুর পর ‘সাজিদ বাহিনী’ এলাকায় পুনরায় সংঘটিত হচ্ছে। এর আগে এই দুই বাহিনীর প্রধান আলতা ও সাজিদকে ভালো হওয়ার শর্তে স্থানীয় হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বানিয়েছিলেন এলাকাবাসী। এরপর কিছু দিন ভালো হয়ে চলললেও মেম্বারের মেয়াদ চলে গেলে পুনরায় গরু চুরি— ডাকাতি , মাদক বিক্রি শুরু করে সাজিদ বাহিনী। তার নেতৃত্বে ভাগনা মাখন ও দুদু ও হামিদ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

নিহতের চাচা আজবর আলী জানান, সাজিদ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আজমান আলীর পরিবারের বেশ কিছু জমি জবরদখল করে রাখে। সম্প্রতি আরো কিছু জমিজমা দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এর জের ধরে ৩১ মার্চ রোববার ইফতারের ঠিক আগমুহুর্তে আজবর আলীর উপর সাজিদ আলীর নেতৃত্বে মাখন, দুদু, আমীরসহ কয়েকজ হামলা চালায়। এসময় আজবর আলীকে বাচাঁতে তার পুত্র জামাল ও তার ভাতিজা তাজুল ইসলাম এগিয়ে এলে তাদেরকেও গুরুতর আহত করে। এরমধ্যে তাজুলের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাকে প্রথমে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাজুল ইসলাম মারা যান। তাজুল ইসলামের স্ত্রী, ২ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছেন। তাজুল ইসলামের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় আজবর আলীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার নং ৫ (০৩/০৪/২০২৪)।

অপরদিকে শহীদ পরিবারের সন্তানের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাজিদ বাহিনীর উত্তানে এলাকায় আতংক সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘটনার ৫দিনেও সাজিদ বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নিহতের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম জানান, তিনি দুবাই ছিলেন। সাজিদ বাহিনীর হামলায় বড় ভাই গুরুতর আহত হওয়ার খবর পেয়ে দেশে আসেন। তিনি বলেন, মুলত আমাদের জমি জমা দখল করে রেখেছে এই বাহিনী। আরো জমি জমা দখলের চেষ্টা করছে তারা। এর অংশ হিসেবে তারা তাজুল ইসলামকে হত্যা করে বলে নজরুল অভিযোগ করেন।

এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই রেজোয়ান আহমেদ জানান, তিনি ওসমানী হাসপাতালে রয়েছেন। নিহতের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করছেন।

জালালাবাদ থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ৪/৫দিন আগে মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে একজন মারাগেছেন। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ওসি বলেন, নিহত তাজুল শহীদ পরিবারের সন্তান কিনা জানা নেই, তিনি আসামি ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, আজমান আলী অবিবাহিত অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে সুনামগঞ্জে সীমান্তে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। কয়েক বছর আগে কবর সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের দখড়ি গ্রামে তার গ্রামে কবর স্থনান্তর করা হয়। নিহত তাজুল ইসলাম সেই শহীদ আজমান আলীর আপন ভাতিজা।

খালিদ  সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ৫ এপ্রিল ২০২৪