সিলেট অফিস : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেট বিভাগে দুদিন ধরে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে গাছপালা পড়ে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙে পূরো বিভাগে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা।
পৃথিবির সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় সিলেটবাসীর। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শুরু হয় হাহাকার। বিদেশে থাকার স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।চরম দুর্ভোগে পড়েন সিলেট বিভাগের প্রায় দেড়কোটি মানুষ।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিনঘন্টায় ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এর আগে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে নগরের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বন্ধ থাকে সিংহভাগ প্রিন্ট পত্রিকার প্রকাশনা। নগর ও শহর এলাকায় দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। বিদ্যুৎ চালিত মটর বন্ধ থাকায় অনেককে নির্ভর করতে হয় বৃষ্টির পানির উপর। বিভিন্নস্থানে টব বালতি ড্রাম দিয়ে পানি সংগ্রহ কর থাকেন নাগরিকরা। বেলা ২ টার দিকে সিলেট নগরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলেও গ্রামাঞ্ল এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিত। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্রুত চালু করতে কাজ করছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা। এমনটা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা-বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। এ কারণে বিদ্যুতের ফিডারগুলো সোমবার রাত থেকে বন্ধ খাকে। তবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে কোনো এলাকায় ফিডারগুলো চালু করা হয়েছে এবং বাকগুলো চালুর চেষ্ট চলছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুৎ ভিাগের কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জানা যাবে বলে জানান তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সিলেট বিভাগে গ্রাহক আছেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। এর মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহক। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা চলছে।
মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, মঙ্গলবার সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকদের চাহিদা ছিল ১৯৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল ৭৫ মেগাওয়াট।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নিম্নচাপ সিলেটে অবস্থান করছিল। এ কারণে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তবে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কমেছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বর্ষণের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর সড়কগুলোতে যানবাহনের সংকট রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষজন। তবে চাকরিজীবিদের নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম রয়েছে। তবে পরীক্ষা থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও বিদ্যালয়ে যেতে দেখা গেছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সবাইকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরামর্শ ও সতর্কতা
স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা সবাইকে নিরাপদ স্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি যেকোনো জরুরি তথ্যের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৮ মে ২০২৪