সিলেটে বিভিন্ন সময়ে ভারী বর্ষণে টিলা ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। টিলার মাটি নরম হয়ে বসতঘরের ওপর পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
দুর্ঘটনার আশঙ্কা জেনেও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মানুষের বসবাস। বৃষ্টি হলেই বসবাসকারী এসব মানুষের মাঝে দেখা দেয় আতঙ্ক। কখন যেন টিলা ধ্বসে ঘরে পড়ে যায়। টিলার পাদদেশে এসব বসবাসকারীদের বেশির ভাগই দরিদ্র স্থানীয় প্রভাবশালীরা টিলার মাটি কাটা ও দখলের জন্য দরিদ্র এসব মানুষকে ঘর বানিয়ে থাকার সুযোগ করে দেন।
এছাড়া কম দামে পেয়ে টিলার পাদদেশে জমি কিনেও ঘর বানিয়েছেন অনেকে। তবে পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাস করা পরিবারগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই সিলেট জেলা প্রশাসনের কাছে।
জানা গেছে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু পাহাড়-টিলা। যেখানে টিলার নিচে বাড়ি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন মানুষজন। সিলেটে টিলার নিচে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। যদিও বিগত দিনে টিলা ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেকে গুরুতর আহত হন। এভাইে গত শনিবার সিলেটের ৪টি স্থানে টিলাধসের খবর পাওয়া যায়। এতে নিহত হয়েছে এক শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ছাড়া টিলা ধসে অন্তত ৪টি ঘর ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নবীগঞ্জে টিলা ধসে আহত হয়েছেন দশজন।
আর জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলা ধসে তিনটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে নগরের আখালিয়ায়ও। পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। বৃষ্টি হয়েছে রোববারও। ফলে বেড়েছে টিলা ধসের। এর কয়েক দিন আগে একই এলাকায় আরও দুটি টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ১৪ মে গোলাপগঞ্জের চক্রবর্তী পাড়া গ্রামে ঘুমের মধ্যে থাকা অবস্থায় টিলা ধসে প্রাণ হারান এনজিওকর্মী অপু পাল। এ ঘটনায় তার ভাইও আহত হন।
গত ৪ জুন রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নে উত্তর আশিঘর, ঈসাপুরে টিলা ধসে ছয়টি বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১২ মে সিলেট সদরের সাহেবের বাজার রামপুর গ্রামে টিলা ধসে কাঁচাঘরসহ তিনটি পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই গ্রামে আরও তিনটি বাড়িতে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ওই দিনই গোয়াইনঘাটের উপজেলার নয়াগ্রামে হাফিজ মো. ফয়জুল করিমের ঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় দশকে সিলেটের ৬১টি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জেলার ৪১২টি পাহাড়-টিলার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৩৫১টি। সরকারি হিসাবে ধ্বংস হওয়া টিলার সংখ্যা ৬১টি বলা হলেও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে-এমন বেসরকারি সংস্থা গুলোর দাবি, গত দেড় দশকে শতাধিক টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিলার ওপরে ও পাদদেশে বসবাসকারী বেশিরভাগ লোকজনই এ রকম দরিদ্ স্থানীয় প্রভাবশালীরা টিলা কাটা ও দখলের জন্য দরিদ্রশ্রেণির লোকজনদের বসিয়েছেন। আবার কম টাকায় পেয়ে টিলার পাদদেশে জমি কিনেও ঘর বানিয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ পরিবশে আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসাব মতে- সিলেট নগর, সদর, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব টিলার ওপর ও পাদদেশে অনেক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই বলেন, আমরা বছর তিনেক আগে একটা জরিপ চালিয়ে দেখেছিলাম জেলায় টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছেন। এখন এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। তিনি বলেন, বসবাসের জন্য এসব টিলার অনেকাংশ কেটে ফেলায় টিলাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এগুলো ধসে পড়ে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে। অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটা, বৃক্ষ উজাড় ও টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের ফলে বৃষ্টি হলেই টিলা ধসে পড়ছে বলে মত এই পরিবেশকর্মীর।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, এটা একটা বড় সমস্যা। তাদের কীভাবে সরানো যায় ও পুনর্বাসন করা যায়, এ নিয়ে ভাবছি। তাদের মধ্যে যদি কেউ ভূমিহীন থেকে থাকেন, তাহলে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, টিলার ওপরে ও পাদদেশে যারা বসবাস করেন চেষ্টা করেও তাদের অন্যত্র সরানো যায় না। এ বছরও আমরা সব ইউএনওর মাধ্যমে মাইকিং করিয়ে টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post