বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা । আর কিছু দিন বাদেই শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে সিলেট জেলা মহানগরীর বিভিন্ন
মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। আর তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
শরৎকালে নদীতে পাল তোলা নৌকা, কাশবনে ফুটে থাকা সাদা সাদা কাশফুল যে
কারোরই মন ভরিয়ে দিবে মুহূর্তেই। এরইমধ্যে ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা
তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।
ফুলপঞ্জিকা অনুযায়ী, দুর্গাপুজা ২০২৩-এর নির্ঘণ্ট- এবার মহালয়া পড়েছে
আগামী ১৪ অক্টোবর, আর ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে শারদীয়
দুর্গোৎসব ।
এবছর ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবীপক্ষ। ২০ অক্টোবর
মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর
আগামী ২৪ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্তি হবে।
সারাদেশের ন্যায় প্রতিমা তৈরিতে কাজ শুরু করেছেন সিলেটের মৃৎশিল্পীরাও।
আসন্ন এই উৎসবকে ঘিরে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেয়ার জন্য চলছে মণ্ডপ
মণ্ডপে নানা ধরনের প্রস্তুতি। এখন শারদীয় উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সনাতন
সম্প্রদায়ের মানুষেরা। পঞ্জিকা মতে এ বছর দশভুজার আগমন ও গমন দুই-ই ঘোটকে
বা ঘোড়ায় এবং দেবীদুর্গা ঘোটকে আগমন করে পালকিতে চড়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন।
আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবী দুর্গার
অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
নিখুঁত হাতের কারুকার্য দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে
তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন
এই প্রতিমা শিল্পীরা।
মহানগরীর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে নানান
প্রস্তুতি, আবার অনেক মণ্ডপে এখনো শুরু হয়নি প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রাথমিক
পর্যায়ে প্রস্তুতি হিসেবে মণ্ডপ গুলোতে দুর্গা প্রতিমার খড় ও মাটির কাজ
শুরু করেছে। এরপর পরবর্তী পর্যায়ে মূর্তিতে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ চলবে।
অন্যদিকে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি ও ডেকারেশনসহ অন্যান্য
কাজগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও মণ্ডপের জন্য তৈরি
করা হচ্ছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা,
হাঁস, সর্পসহ প্রায় ১২টি প্রতিমা।
দাড়িয়াপাড়ার দূর্গা মন্দিরের প্রতিমা কারিগর মাখন চন্দ্র পাল বলেন,
প্রাথমিক পর্যায়ে খড় ও মাটির কাজ শেষ করেছি, পরবর্তী পর্যায়ে মাটির
ফিনিশিং এর কাজ হবে। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে আমাদের দম ফেলার ফুসরত নেই।
দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী
এবং দেব সেনাপতি কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে
তুলবো নিপুন হাতের ছোঁয়ায়।
তিনি আরও বলেন, এবছর ৪টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ ধরেছি । ভিন্ন ভিন্ন
চুক্তিতে ৩ জন মিলে প্রতিমা তৈরি করছি।
গত বছরের তুলনায় এবছর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে চাহিদার তুলায়
মজুরি কম পেলেও কাজ করতেই হবে । তাই পূজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ এর কাজ
করতে হবে। তবে চাহিদার তুলায় আমরা মজুরি কম পাচ্ছি। সেই সাথে
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি
পাই তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলেও
গেছে। টিকে থাকার জন্যই প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি কৃষি কাজও করতে হয়।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, আসন্ন
দুর্গোৎসব উৎসবকে সফল করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যাপারে অন্যান্য বছরে মতো এবারও প্রশাসনিক
সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলোকসজ্জাসহ নানাভাবে
সাজানো হবে সবগুলো মণ্ডপ। এখন ঢাকের তালে পূজা শুরু হওয়ার অপেক্ষা
মাত্র।
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় ৪৭৩ ও মহানগরীর ১৫০টি মন্ডপে
দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে
দুর্গোৎসবের শুরু ও ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে উৎসব শেষ হবে।

Discussion about this post