এস এ শফি, সিলেট :
বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে থাকেও বাকি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়া পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে গতকালের টানা বৃষ্টিতে সিলেট মহানগর এলাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হলেও সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি কমায় ধীরে ধীরে এসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এতে ক্রমশ বাড়ছে জনদুর্ভোগ, পানিতে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে থাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন তারা। পাশাপাশি এ নিয়ে জনমনে আতংকের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়ে পানি, দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফলে বার বার একই দূর্ভোগে পড়তে হয় সিলেটের মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। লোকালয় থেকে পানি নামতে শুরু করায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে গেছেন। ঘরে ফিরলেও স্বস্তিতে নেই তারা বন্যার তীব্রতায় নষ্ট হয়েছে ঘরের আসবাবপত্র, অনেকের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। ওই পয়েন্ট বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি ১৫ দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। ওই পয়েন্ট বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। এছাড়া সিলেটের অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে।
তিনি জানান, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণে নদ-নদীর পানি ধীর গতিতে সমতল হ্রাস পাচ্ছে। সিলেট ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হলে নদ-নদীর পানি আরও কমবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৫২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিলেট মহানগরীর প্রায় ২৮টি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। সেখানে নিয়মিত রান্না করা খাবার ও ওষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান স্বাক্ষরিত বন্যা পরিস্থিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০টি উপজেলায় ৬৫টি ইউনিয়নের ৮৩৫ গ্রামের ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ জন বন্যা কবলিত হয়েছেন। জেলায় ৫৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। অনেক এলাকায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান, উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামছে। নতুন করে বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল না নামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার রাস্তা-ঘাট থেকে পানি নেমে গেছে। হাওর এলাকায় পানি জমে রয়েছে। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নত হবে। এখনও পর্যটন কেন্দ্র খোলা হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, অনুকূলে আসলেই উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ জানান, উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খোলে দেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড কর্মকর্তা ট্যাগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম কাজ করছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সোহাগ//জুন ০৫,২০২৪//

Discussion about this post