এস এ শফি, সিলেট :
সিলেটে দুদিন ধরে কমেছে বৃষ্টিপাত। উজান থেকে ঢল নামাও থেমেছে। ফলে কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানি।
জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দফায় জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের মানুষ বেশি আক্রান্ত হলেও দ্বিতীয় দফায় সিলেটের সব উপজেলার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। নদ-নদীর পানি কমলেও এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও প্লাবিত রয়েছে। এতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমছেই না।এখনও অসংখ্য ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রয়েছে হাঁটু পানি। এতে দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন পানিবন্দী বাসিন্দারা।
এদিকে বন্যায় ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১ জন মানুষ এখন পানিবন্দী। গত রাতে ২৮ হাজার ৯২৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় ছিলো। তবে পানি নামতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৩ হাজার ৬৫০ জন বাড়িতে ফিরে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট মহানগরের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিলো সেখান থেকে পানি নামা শুরু করেছে। তাছাড়া জেলার উপজেলাগুলো থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে অধিকাংশ রাস্তাঘাট, মানুষের বসতবাড়িতে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে।
সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তার হোসেন মান্না বলেন, পানি কিছুটা কমেছে। তবে ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করে সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এখন মেরামত করতে হবে। তাছাড়া এখন ঘরের ময়লা পরিষ্কার করছি। কাদার জন্য রাস্তায় বের হওয়া যায় না। টানা কয়েকদিন রোদ না থাকলে আমাদের দুর্ভোগ কমবে না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আহমেদ নুর জানান, এখনও ঘর, আশপাশের রাস্তাঘাট পানির নিচে রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে। তবে ঘরের বেশিরভাগ জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের দেয়া শুক্রবার সকালের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরের ২৯টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে এতে পানিবন্দী হয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ। ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৭ হাজার ৯৫০ জন। অন্যদিকে জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৭টি ইউনিয়নের ১হাজার ৫৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এতে পানিবন্দী হয়েছেন ৯ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৩ জন। এসব উপজেলায় ৬৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে এতে ১৭ হাজার ৩৩৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে সিলেট জেলার বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় হাইটেক পার্ক, কোম্পানীগঞ্জ এবং সারীঘাট, জৈন্তাপুর এলাকায় ঘণ্টায় ৬০০ লিটার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এ প্লান্টের মাধ্যমে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সদর উপজেলায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ।
বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার (২১ জুন) নদ-নদীর পানি কমার গতি আরও বেড়েছে।
একইভাবে সিলেট ও উজানে কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতও হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার (২১ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি।এদিকে পাঁচদিন পর শুক্রবার সকালে সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। বিভিন্ন এলাকায় রোদ উঠতে দেখা গেছে। এতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘আজ নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
একইভাবে কুশিয়ারা নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
অপরদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি। একইভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও কোনো বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, গতকাল দুপুর থেকে সুর্য উঠেছে ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//