সিলেট অফিস :এক বছর আগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পুলিশ ও শাসকদল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী লীগের হাতে খুন হন জিুলু আহমদ দিলু নামের যুবদল নেতা। এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর মামলা হয়েছে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই বুলু মিয়া। তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মদন গৌরি গ্রামের ইলিয়াছ আলী এলাইছের ছেলে। নিহত দিলু সিলেটের গোলাপগঞ্জ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
মামলায় সদ্য বদলিকৃত সিলেট রেন্জ পুলিশের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, ৪ পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের ৩৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০-১৫০ জনকে।
প্রধান আসামি করা হয়েছে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামসুদ্দোহাকে।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন- গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ চলাকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ ও সরকার দলের লোকজন হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। এসময় দিলু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় পুলিশের গাড়ি এসে তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে দিলু মাটিতে পড়ে গেলে তাকে মারধর করা হয়। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দিলুকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি এমন অভিযোগ করে বাদী বলেন-মামলা না করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিহতে বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের ভয়-ভীতি দেখায়। হামলা-মামলার ভয় ও বাড়িঘর দখলের হুমকি দেওয়ায় বাদী মুখ খুলতে সাহস পাননি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-গণ আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতন হওয়ায় অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মামলা করেছে বলে জানিয়েছে নিহত দিলুর পরিবার।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর গন্যে থানায় রেকর্ড করার জন্য দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য কয়েকজন আসামি হলেন- সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার পুলিশ পরিদশর্ক আবুল হোসেন, এসআই লোকমান হোসাইন, সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ।
এদিকে, ঘটনার পর দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা গণমাধ্যম-কে বলেছিলেন- ওই যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকালে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
তবে ওই সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দাবি করেছিলেন- ঘটনার দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮ টার মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যুবদলের নেতা-কর্মীরা অবরোধ সমর্থনে অবস্থান নেন। তখন পুলিশ মারমুখী হয়ে তাঁদের ধাওয়া করে। এ অবস্থায় সবাই দৌড়ে পালাতে থাকেন। দিলু আহমদও সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলে স্থান ত্যাগ করতে রওয়ানা হন।
এ সময় পুলিশের একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলকে জোরে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন দিলু। পরে পুলিশ তাঁদের গাড়িতে করে দিলুকে নিয়ে যায়। পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ও তাঁকে মারপিট করা হয়। বিকেলের দিকে হাসপাতালে দিলুর মৃত্যুর খবর পান পরিবার ও নেতাকর্মীরা।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪