সিলেটে গত কয়েক দিন থেকেই ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে ২৪ ঘাটনায়ও অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ব্যান্যার আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে থেকে নেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ সময়ের প্রচারণা। কাল সোমবার (১৯ জুন) শেষ হচ্ছে প্রচারণার সময়সীমা। ফলে পাড়া মহল্লা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বস্তি চষে ফেলছেন প্রার্থীরা। আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেই হিসেবে ১৯ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারণা চলবে। তাই প্রার্থীরা তাদের সর্বশক্তি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে শেষ সময় পার করছেন।
রোববার (১৮ জুন) সকাল থেকেই প্রার্থীদের পক্ষে মিছিল, স্লোগান ও মাইকিং ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। তবে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারণা ও গণসংযোগে অধিক ঘাম ঝরাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সর্বত্র বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সড়ক, পাড়া, মহল্লায় প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা ঘুরছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। এছাড়াও চলছে মাইক বাজিয়ে প্রচারণা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রার্থী।
দুপুর দুইটার দিকে নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট গড়ার অঙ্গীকার করে নৌকার জন্য ভোট চান।
অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও সরকারের নানা সমালোচনা, সিলেটের নানা সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলে লাঙ্গল মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছেন এবং আধুনিক সিলেট গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
গত শনিবার ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তাঁর অভিযোগ- সিলেটের এমসি ও সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রতিপক্ষ প্রার্থী সন্ত্রাসী বাহিনী জড়ো করছেন সহিংসতা ঘটানোর জন্য। এই জন্য ভোটের দিন এ দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ রাখতে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় ছিলেন ৩ জন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় সিলেটে এখন লড়াই হবে শুধু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে।
আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নেয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটর রয়েছেন ৬ জন।
২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। কেন্দ্র ছিল ১৩৪টি, ভোট কক্ষ ছিল ৯২৬টি এবং অস্থায়ী কক্ষ ছিল ৩৪টি। এবার ৪২টি ওয়ার্ডে কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৮৫টি এবং ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩৯০টি।
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সকল ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ।
আলাপকালে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, আগামী ১৯ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত থাকবে। ২০ জুন সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হবে। সিসিকের সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ১৮,২০২৩//

Discussion about this post