সিলেট প্রতিনিধি: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিলেট নগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ১৫ নং আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯।
রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে বন্দরবাজার এলাকা থেকে সেলিম মিয়া নামের আসামিকে গ্রেফতার করে। সেলিম মিয়া সিলেট জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের সহ-সভাপতি। তিনি পলাতক ছিলেন।
গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি মশিহুর রহমান সোহেল।
তিনি বলেন, এই মামলার সব আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র্যাব-৯।
শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে বিএনপির মিছিলের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব।
তিনি দৈনিক নয়াদিগন্ত ও জালালাবাদের রিপোর্টার ছিলেন। ঘটনার এক মাস পর (১৯ আগস্ট) নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মামলার আসামিরা হলেন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও সেসময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।
অন্য আসামিরা হলেন-সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার সদ্য সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজী রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে, সিলেট সিটি করপোরেশনের পিআরও সাজলু লস্কর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, নগরের চালিবন্দর নেহার মঞ্জিলের বাসিন্দা শিবলু আহমদ (মো. রুহুল আমিন), জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের সহ-সভাপতি সেলিম মিয়া, আজহার ও ফিরোজ।
অপরদিকে, ঘটনার পাঁচ দিন পর তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।
পুলিশ ওই সময় জানায়, আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করেছে তারা।
তবে পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখই নেই। এছাড়া পুলিশের এই মামলা ১ মাস পর্যন্ত কাউকে করেনি তারা। তাই বাধ্য হয়ে তুরাবের পরিবারকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
এদিকে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি তুরাব হত্যা মামলার ৬ নং আসামি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) গ্রেফতার করেছিলো টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি।
এহ/21/10/24/ দেশ তথ্য

Discussion about this post