সিলেট অফিস:
সিলেট সীমান্তের ছয়টি উপজেলার শতাধিক পয়েন্টে উভয় পারের সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালান হয়ে আসছে।
চোরাচালানের পণ্য পরিবহনে জড়িত রয়েছে হাজারখানেক লোক, যাদের নিয়ন্ত্রণ করেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সীমান্তে বসবাসকারী প্রভাবশালীরা। এই চোরাকারবারিরা প্রতিনিয়ত সীমান্ত দিয়ে গরু, মহিষ, বিভিন্ন ধরনের মাদক, চিনি, মসলা, মটরশুঁটি, শাড়ি, থ্রিপিস, সিগারেট, বিস্কুট, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে নিয়ে আসছে।অথচ এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব সময় সতর্ক দৃষ্টি থাকে বিজিবি ও পুলিশের। সীমান্তের ওপারে সক্রিয় ভারতের বিএসএফও। এত সতর্ক দৃষ্টির মধ্যেও এই সীমান্তে চলে এসব চোরাচালান।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে সীমান্ত দিয়ে আসা প্রায় ২৫ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এর মধ্যে ২০২১ সালে ৫ কোটি ও ২০২২ সালে ২১ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। গত দুই মাসে বিজিবি সীমান্ত এলাকা থেকে ২ লাখ ৫৮ হাজার কেজি চিনি জব্দ করে; যার বাজারমূল্য ৪ কোটি টাকা।
সীমান্তে চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিজিবি, পুলিশ ও বিএসএফের সংঘর্ষও হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের ওপারের খাসিয়াদের গুলিতেও প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককে। সর্বশেষ গত ২২ জুলাই জৈন্তাপুর সীমান্তে গুলিতে মারা যান রুবেল নামে এক যুবক।
জানা গেছে, গোয়াইনঘাট সীমান্তে চোরাচালানের কমপক্ষে ১৫টি স্পট রয়েছে। এর মধ্যে– জাফলং জিরো পয়েন্ট, বিছনাকান্দি, প্রতাপপুর, সোনারহাট, নলজুড়ি, আমস্বপ্ন, নকশিয়াপুঞ্জি, লামপুঞ্জি, সংগ্রামপুঞ্জি অন্যতম। এসব চোরাচালান পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করে ঢালারপারের বাসিন্দা দুলাল, আব্দুল্লাহ, মোস্তফা, হেলাল মেম্বার, কামাল, শাকিল প্রমুখ ব্যক্তি। থানা পুলিশের নামে তাদের পাঁচ-ছয়জন লোক লাইনম্যান হিসেবে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালাইরাগ, বরমসিদ্দিপুর, মাঝেরগাঁও, উৎমা, লামাগ্রাম ও তুরং সীমান্ত দিয়েও চোরাচালান হয়। তবে সিংহভাগ পণ্য আসে বরমসিদ্দিপুর সীমান্ত দিয়ে। সেখানে লাইনম্যান পরিচয়ে টাকা নেন ওই এলাকার হেলাল আহমদ ও তৈয়ব আলী। কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত ছাড়াও সোনারখেওড়, বড়গ্রাম, ভালুকমারা, ডেয়াটিলা, ডাউকেরগুল, বাখালছড়া, এরালীগুল, ছোটফৌদ, নারাইনপুরসহ ২০টি স্পট দিয়ে চোরাচালান হয়। এসব সীমান্তে চোরাকারবারে লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের শামসুল ইসলাম, আবুল কালাম, সাদ্দাম হোসেন, মারুফ, ইকবালসহ অন্তত ৫০ জন জড়িত। জৈন্তাপুর সীমান্তেও আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী, কাঁঠালবাড়ি, কেন্দ্রীবিল, ডিবিরহাওর, আসামপাড়া, ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ি, টিপরাখলা, কমলাবাড়ি, গোয়াবাড়ি, বাইরাখেল, হর্নি, মাঝেরবিল, কালিঞ্জিসহ কমপক্ষে ২৫টি চোরাচালান স্পট রয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) শেখ সেলিম বলেন, পুলিশ মাদক উদ্ধার ও চোরাচালান রোধে কাজ করছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী উপজেলা থেকে প্রায়ই চোরাচালানের মাল উদ্ধার করে পুলিশ। কেউ পুলিশের নাম করে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজিবির সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সেলিম হাসান বলেন, ‘নজরদারি বাড়ানোয় আগের তুলনায় এখন চোরাচালান কম হচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে পানি থাকায় সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। চোরাচালানের সঙ্গে অনেক সময় বিস্ফোরকও আনা হয়। বেশ কিছু বিস্ফোরক জব্দও করা হয়েছে।’
বিজিবির নাম ভাঙিয়ে টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কানেও এসেছে। প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চোরাকারবারিদের গডফাদারদের আইনের আওতায় নিয়ে এলে চোরাচালান রোধ সম্ভব।
দৈনিক দেশতথ্য//এস//

Discussion about this post