দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে প্রথমদিকে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও রবিবার সকাল থেকে পুরো নির্বাচনী এলাকায় নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত এ আসনে নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী এক তরফা পুরো মাঠে ধাপিয়ে বেড়িয়েছেন। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্ট কতৃক সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার খবরে নির্বাচনী এলাকায় তাকে নিয়ে নতুন উম্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট ২ আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এম ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত কারণে এ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার দলীয় প্রার্থী পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।এবার যে কোনো মূল্যে এ আসন নিজেদের দখলে নিতে চায় দলটি। নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া দলীয় নেতাকর্মীরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী গণফোরামের মোকাব্বির খান। বর্তমান সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় মোকাব্বির খান নিজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জনসমর্থন কাজে লাগিয়ে ফের সংসদে যাওয়ার প্রত্যাশা রাখছেন তিনি।মোকাব্বির খান আসনের বেশ কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধি নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন, তবে জনমত জরিপে ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকতে তাকে আরো বেগ পেতে হবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী। তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে এ আসনে প্রাণ ফিরে পায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি। তৈরি হয় কর্মী-সমর্থক। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম ও দলীয় কর্মী সমর্থকদের সহযোগিতা নিয়ে আবার সংসদে যেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ইয়াহইয়া চৌধুরী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলার দু’বারের উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। পরে নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করলে প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান।রোববার হাইকোর্ট কতৃক মেয়র মুহিবুর রহমানের বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পান।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ২৪ ঘন্টার রাজনীতিবিদ খ্যাত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী দীর্ঘ দিন যাবত তার নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কর্মসূচি ছাড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত পুরো আসনে তিনি একাই মাঠ দখলের লড়াই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু মুহিবুর রহমানের প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় অন্যান্য প্রার্থীদের পেছনে ফেলে মুহিব নিজেই প্রথম কাতারে চলে আসেন। এক সময়ের জাতীয় পার্টি নেতা মুহিব এখন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থাকলেও বিশ্বনাথ ছাড়া ওসমানীনগরে ও তার বিপুল সংখ্যক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন। নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে মেয়র মুহিব পুরো আসনে রুটিন ভিত্তিক জনসংযোগ ও মতবিনিময় করেছেন। প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় খবরে মুহিব সমর্থকদের মধ্যে ও চাঙাভাব বিরাজ করছে। ফলে সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে এ আসনের ভোটের চিত্র ও বদলে যাচ্ছে। বিএনপির ঘাটি বলে পরিচিত এ আসনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শফিক চৌধুরী এবং পৌর মেয়র মুহিবের মধ্যেই খেলা উঠবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী, গণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রব, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মো. জহির,ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মো. মনোয়ার হোসাইন ও বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান।
রুবেল//সোহাগ//দৈনিক দেশতথ্য//ডিসেম্বর ২৪,২০২৩//

Discussion about this post