এস এ শফি সিলেট : সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আজাদের ভাতিজা তাহমিদুর রহমানসহ চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিসিক’র পাঁচবারের কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার ঘটনা নিয়ে নগরে তোলপাড় চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) গভীর রাত সোয়া ২টার দিকে নগরের ভাটাটিকর এলাকার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। অবশ্য হামলা চলাকালে কাউন্সিলর আজাদ বাসায় ছিলেন না। তিনি ৩২ নং ওয়ার্ডে তার বাড়িতে রাত যাপন করছিলেন।
সিলেটের বহুল আলোচিত ‘টিলাগড় গ্রুপ’-এর একটি অংশের দাপুটে নেতা আজাদ ওই ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর।
এর বাইরেও টিলাগড় গ্রুপে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের পৃথক দুটি শক্তিশালী বলয় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহায় টিলাগড় পয়েন্টে বসানো কোরবানির পশুর হাটের টাকা লেনদেন ইস্যুতে রাব্বিসহ বেশ কয়েকজন হামলার এ ঘটনা ঘটায়।
কাউন্সিলর আজাদের অনুসারীদের অভিযোগ, আলোচিত কবীর ওরফে হেরোইন কবীরের গোষ্ঠীর শেখ নজরুল ইসলাম ওরফে বিজয়, রাব্বী, রিয়াজুল, সুহেল, নাসির, সামাদসহ বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তার পৈতৃক ভিটায় হামলা চালান। পরে নগরের পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় কাউন্সিলরের নিজ বাসভবনেও হামলা চালিয়ে বাসার জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই ঘটনার পর পরই আজাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও মহানগর যুবলীগের সদস্য শমশের আলী সারোর বাসায়ও হামলা চালিয়ে একটি প্রাইভেট কারও ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে আজাদের অনুসারীরা জড়ো হলে তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন হামলাকারীরা। এতে আজাদের ভাইয়ের ছেলে তাহমিদুর রহমান এবং তার অনুসারী হীরক রঞ্জন দে পাপলু, ফয়ছল ও মুতাছির আহত হন।
স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলাকারীদের কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে আজাদুরের বাসায় হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তার অনুসারীরা জড়ো হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন হামলাকারীর বাসায় আজাদের অনুসারীরাও হামলার চেষ্টা চালায়। তবে হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, আমি ঘটনার সময় ৩২ নং ওয়ার্ডের আরেকটি বাসায় ঘুমে ছিলাম। তখন ফোনে জানতে পারি আমার টিলাগড়ের বাসায় হামলা হয়েছে। তাৎক্ষণিক আমার ভাই-ভাতিজারা রওনা হলে পথেই হামলাকারীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতে ভাতিজা তাহমিদুর রহমানসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এলাকায় বিভিন্ন চাঁদাবাজি, হামলা-দখলবাজি চালিয়ে আসছে একটি চিহ্নিত মাদকসেবীচক্র। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় আমার কাছে অভিযোগ করেছে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল। ওই ক্ষোভ থেকেই তারা হামলা চালিয়েছে। ’
অভিযোগের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কাউন্সিলর আজাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক নষ্ট করতে নেপথ্যে থেকে ইন্ধন দিয়ে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আস্তে আস্তে তাদের নামও ওঠে আসছে। আর হামলায় জড়িত চোর-ডাকাত কোনো দলের হতে পারে না। আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাছাড়া হামলায় জড়িত ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দিয়েছি।
এ বিষয়ে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, রাত সোয়া ২টার দিকে রাব্বির নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলা চালায়। তারা কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের বাসার জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। এরপর শমসের আলী সারোর বাসায় হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
হামলার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, গত কোরবানির ঈদে নগরের টিলাগড়ে বসানো পশুর হাটের টাকা লেনদেন নিয়ে ক্ষোভ থেকে রাব্বির নেতৃত্বে হামলার এই ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের পাঁচবারের কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদের বাসায় হামলার ঘটনা নিয়ে নগরে তোলপাড় চলছে। পৃথক হামলার ঘটনায় ২টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর আজাদ।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৮ জুন২০২৪

Discussion about this post