Print Date & Time : 1 May 2025 Thursday 3:56 pm

সীতাকুণ্ডের আগুনে জ্বলে ওঠা ভয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেল, কন্টেইনারে আগুন জ্বলছে। দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। হঠাৎই বিকট একটি বিস্ফোরণ। যে ক্যামেরায় ভিডিও দেখাচ্ছিল তা অন্ধকার হয়ে গেল। সাথে কত জনের জীবন যে অন্ধকার হল কে জানে! হয়ত কিছুটা সময় গেলে একটি হিসাব-নিকাশও মাপা হবে। কিন্তু আমার আপাতত ভাবনার ইস্যু সেখানে কর্মরত দমকলকর্মীর দল। আগুন নেভাতে যাওয়া প্রশিক্ষিত দল স্বয়ং আক্রান্ত। খোদা না করুক, বড় আগুনের খবরে সাংবাদিকরা যেভাবে উপস্থিত থাকে, ঘটনা দিনের বেলা হলে কী কী ঘটতে পারত ভেবে গা কাঁটা দিয়ে উঠছে।

২০১৩-২০১৪ সালের পেট্রোলবোমায় আক্রান্ত ইভেন্টগুলো করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো কর্মীদের জন্য বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট ব্যবস্থা করেছে। যদিও সেসব কতটুকু কাজের, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবুও ব্যবস্থা একটা এসেছে। এর ফলে সচেতনতা বেড়েছে। বিশেষকরে টেলিভিশন অফিসগুলো জরুরি ইভেন্টে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট নিশ্চিত করে এখন।

কিন্তু খেয়াল করে দেখেন, এই যে ঘন ঘন আগুন লাগা ইভেন্ট কাভার করতে হয়, কত জনের কাছে অগ্নিনিরোধক সরঞ্জাম দেখতে পান? মিনিমাম একটি রেসপিরেটরি মাস্ক, একটি অগ্নিসহ অ্যাপ্রোন ও একজোড়া অগ্নিসহ বুট থাকা কতটা যে জরুরী! এইসব সহায়ক সরঞ্জামের অন্তত কয়েকটি সেট ক্যামেরা-মাইক্রোফোনের মতো স্টোরে অ্যাভেইলেবল থাকা দরকার।

বছর কয়েক আগে একবার আলাপ তুলেছিলাম, দুর্ঘটনা কবলিত ইভেন্ট কাভার করার জন্য আমাদের তেমন কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অথচ, একজন ভিডিও জার্নালিস্টকে, একজন রিপোর্টারকে দুর্ঘটনা কবলিত ইভেন্টে ঘটনার মূলে অবস্থান করে কাজ করতে হয়। আগুন লাগা, ভূমিকম্প, বন্যা, মারামারিসহ ইনভেস্টিগেশন করতে হয় এমন বিবিধ ইভেন্ট কাভার করতে গেলে আমরা সাধারণত উপস্থিত বুদ্ধি, আগের অভিজ্ঞতা কিংবা সিনিয়রদের মুখের বয়ান থেকে পাওয়া আন্দাজ জ্ঞান দিয়ে কাজ করে থাকি। অথচ, আমাদের দরকার সুনির্দিষ্ট ও বিষয়ভিত্তিক সরাসরি প্রশিক্ষণ।

একবার টিসিএ-এর সহযোগিতায় এমআরডিআই-এর একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল আমার। সেখানে একটি সেশনে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় ইউনিটের এক জন সদস্যের মাধ্যমে বোমা আক্রান্ত বা বোমা আতঙ্কিত ইভেন্ট কাভার করার জন্য সম্যক ধারণা নিয়ে কাজ হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের জন্য ধন্যবাদ। একই রকমভাবে অগ্নিদুর্ঘটনা কাভারেজেও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা খুব দরকার।

আমাদের প্রতিষ্ঠাগুলো এসব নিয়ে ভাবতে শুরু করবে একদিন, আমি আশাবাদী। কিন্তু তার আগে আমাদের যত যত সাংবাদিক সংগঠন আছে, তারা তো সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে, নাকি?

সাংবাদিক নেতারা অনেক কাজ করেন। তারা বসে থাকেন না বলেই জানি। কিন্তু চেয়ার দখলের চেষ্টাটা যতটা চেখে পড়ে, অন্য চেষ্টা তত বড় দেখতে পাই না। কেবল সংগঠনগুলোতে নির্বাচন এলে তাদের যত আলোড়ন দেখি, তাতে জনকল্যাণের প্রত্যয় কম দেখি। আমি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

অন্তত কোনো একদুইজন সংবাদকর্মী আগুনে ঝলসে যাওয়ার আগেই আমাদের বোধদয় হোক। তার আগে সংবাদকর্মীরা স্ব স্ব উদ্যোগে নিজেদের জন্য নিজেদের পরিবারের জন্য সাবধান হোক। সচেতন থেকে কাজ করুক।
সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আল্লাহ কবুল করুক, আহতদের হেফাজত করুক।

আতোয়ার হোসেন
গণমাধ্যমকর্মী