ভারতের ওপার হতে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে বানের পানির মত গভীর রাত হতে ভোর পর্যন্ত সারারাত গরু আসছে অবৈধ পথে। সীমান্তের ২২টি স্পট দিয়ে এভাবে গরু ঢুকছে। গরুর পায়ের খোচায় রোপনকৃত ফসল পেঁয়াজ, তামাক, উঠতি সরিষা খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ফসল রক্ষায় গরু চোরাচালানি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবিকে অভিযোগ দিয়ে কোন সুফল পাচ্ছে না। শেষে নিজেরাই ফসল রক্ষায় দিনরাত পাহাড়া বসিয়েছে। ফসল রক্ষায় হস্তক্ষেপ কামনা করেছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রীর।
জেলার আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর সীমান্তের ৫ শতাধিক কৃষক বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনকে ফসল রক্ষায় গরু পাচার বন্ধ করতে অভিযোগ জানায়।
তাদের দাবী চোরাকারবারীর পক্ষে গরুর ডাঙ্গোয়ালরা ভারত থেকে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে গরু এনে সীমান্ত এলাকার ফসলের খেত দিয়ে নিয়ে যায় । এক সাথে শতশত গরু ফসলের খেত দিয়ে নিয়ে যাওয়ায় গরু ও ডাঙ্গোয়ালের পায়ের নিচে চাপপড়ে ফসলের খেত সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিরীহ কৃষক। ডাঙ্গোয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য রাত জেগে ফসলের খেত পাহারা দিচ্ছে কৃষক- কৃষানি । কখনো কখনো কৃষক – কৃষানিকে জিম্মি করে গরু পাচার করে নিয়ে যায়। প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি সকলে চোরাকারবারির হাতের মুঠোয় বলে প্রচার করে আসছে পাচারকারীরা।
দূর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীরমুক্তিযোদ্ধা নানু জানান, ডাঙ্গোয়ালরা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে পাচার করে। তারা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় গরু গুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যায় সেটা সকলে জানে। গরু তো আর পকেটে করে নিয়ে যায় না। প্রকাশ্য নিয়ে যায়। কাঁটাতারে বেড়া হতে সড়কে তোলা পর্যন্ত ফসলের জমি ব্যবহার করে। এতে ফসলের খেত দুমড়েমুচড়ে যায়। তারা পর তারা সড়ক পথ ব্যবহার করে হাটে তুলে। কৃষকরা সীমান্ত এলাকায় ধান, সবজি, ভুট্টা, সরিষা ও তামাকের চাষ করেছে। পাচারকারী ও ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে ডাঙ্গোয়ালদের আতংকে থাকতে হয় সীমান্তের কৃষকদের। ফসল নষ্ট হলে কোন প্রতিকার তারা পায় না। দূর্গাপুরের কৃষক আক্কাস আলী (৫৫) জানান, সীমান্তে দুই বিঘা জমিতে তামাকচাষ করেছে। গরু পাচার কারী ও ডাঙ্গোয়ালরা রাতে তার জমির উপর দিয়ে গরু নিয়ে গেছে। পুরো জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। দুই বিঢ়া জমি প্রস্তুত ও তামাক রোপন করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরোটাই মাটি হয়ে গেছে। সোবাহান পেঁয়াজ রোপন করেছেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ গুটি গুটি হয়েছে। তাতেই গরুর পায়ের খচায় সব শেষ। এক বিঘা জমিতে ৯শত টাকা কেজি দরে পেঁয়াজের বীজ বোপন করেছিল। বীজ ও জমি তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। শীতকালে ঘনকুয়াশা নামলে ডাঙ্গোয়ালরা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারনে সীমান্ত এলাকার জমি থেকে তারা আশানুরুপ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। এসব পাচার প্রকাশ্য চলে। সীমান্তে বিজিবি ডিউটি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ
দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহেরুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন ডাঙ্গোয়ালকে ফসলের খেত দিয়ে গরু আনতে নিষেধ করেছে কিন্তু তা কোন কাজে আসছে না। স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ এমন কি অধিনায়ক কে অবহিত করা হয়েছে। পত্র পত্রিকায় কয়েক দিন ধরে রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে আসছে।শীত মৌসুম নামার সাথে সাথে বানের পানির মত ঢুকছে সীমান্তের কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে ভারতীয় গরু। সাথে ঢুকছে বিস্ফোরক, ক্ষুদ্রাস্ত্র ও মাদক। প্রতিরাতে সীমান্তের ২২টি স্পটে শতশত গরু ঢুকছে। এসব গরুর সীমান্তের চাপারহাটে প্রতিদিন বিক্রি হয়।দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post