Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 6:22 pm

সুনামগঞ্জে ধোপাজানের জব্দকৃত পাথর নিলামে

আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে : ৬৫ হাজার ঘনফুট পাথর প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা মূল্যে নিলামে দিয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন।

পৃথক পৃথক ২টি প্লটে ভাগ করে ৬ জন আগ্রহী অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের পুরান গুদিগাঁও নিবাসী মোঃ আলীনূরকে পূর্বের জব্দকৃত পাথর নিলাম দেয়া হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকাল ৩টায় ধোপাজান চলতি নদীর পূর্বপাড়ে জব্দকৃত পাথর নীলাম প্রদানকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট সুকুমার সাহা, বিশ্বম্ভরপুরের সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন, সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রসিদ আহমদ, ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেনসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ১ লাখ ৫ হাজার ৩ শত ৭১ ঘনফুট পাথর প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা মূল্যে নীলাম দিয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসন। পৃথক পৃথক ৬টি প্লটে ভাগ করে ৬ জন আগ্রহী পাথর ক্রেতাকে পূর্বের জব্দকৃত পাথর নীলাম দেয়া হয়। ৩১ জানুয়ারি রোববার সকাল ১১টায় ধোপাজান চলতি নদীর পশ্চিমপাড়ে জব্দকৃত পাথর নীলাম প্রদানকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদিউর রহিম জাদিদ,উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর আলী,সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম সিদ্দিকী তপন,বিজিবি,পুলিশ প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের কর্মকর্তাগনসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। নীলাম ক্রয়কারীরা হচ্ছে শহরের জামতলা নিবাসী মৃত সুন্দর আলীর পুত্র আবু সুফিয়ান,আবু সুফিয়ানের পুত্র রাহিদুল ইসলাম বিকি,পশ্চিম ডলুরা নিবাসী কালা মিয়ার পুত্র শাহ আলম,কালিপুর নিবাসী ধনু মিয়ার পুত্র ফরিদ মিয়া,পশ্চিম ডলুরা নিবাসী মৃত ছনু মিয়ার পুত্র আব্দুল ওয়াদুদ ও নুরুল ইসলামের পুত্র জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।

সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ বলেন, ধোপাজান নদী হতে বেআইনীভাবে উত্তোলিত পাথর যারা স্তুপীকৃত আকারে নদীর পাড়ে রেখে দিয়েছিল সেইসকল জব্দকৃত পাথর আমরা নিলাম দিয়েছি। এর মানে এই নয় আমরা কাউকে বা কোন নিলাম গ্রহনকারীকে ধোপাজান চলতি নদী বালি পাথর মহাল ইজারা দিয়েছি। কেউ যদি আমাদের নিলামপত্র বা ক্ষমতাপত্রকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নদী হতে বালি পাথর উত্তোলন করে এবং আমাদের অনুমতি ব্যতিত ইঞ্জিন নৌকা,বাল্কহেড কিংবা ছোট নৌকা দ্বারা বহন করে তাহলে তারা যেই হউকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিজ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

 সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে ধোপাজান চলতি নদীতে অভিযান পরিচালনা করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মালিকবিহীন অবস্থায় ১০টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। পরবর্তীতে ৬টি ড্রেজার মেশিন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং ৪টি ড্রেজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় রাখা হয়। তারা বলেন,এসব ঘটনা থেকে চোরাকারবারীরা শিক্ষা নেয়া উচিত। তারপরও যদি এরা সতর্ক না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রশাসনের পাথর নিলামের সংবাদে সুনামগঞ্জ শহর ও উত্তর সুনামগঞ্জের চোরাকারবারী বালিপাথর খেকো সিন্ডিকেট গত এক সপ্তাহ যাবৎ রাতে ধোপাজান নদীর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বালি পাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকা বের করে নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তবে ধোপাজান নদীতে অবস্থিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের টহলদল রাতের বেলা যাহাতে অবৈধ বালি পাথরের নৌকা আটক করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সেজন্য কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন।

এদিকে সরকারের স্বীকৃত সুনামগঞ্জের প্রকৃত বালিপাথর ব্যবসায়ীরা বলছেন,সরকারের মন্ত্রীপরিষদসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ধোপাজান নদী বালি পাথর মহাল ইজারা প্রদান কিংবা খাস কালেকশন প্রদান বন্ধ রাখার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করলেও নিলাম প্রদানের নামে সরকারের আদেশ লংগন করা হচ্ছে। যেসব সিন্ডিকেট  নদী হতে অবৈধভাবে বালি পাথর লুটতরাজ করছে তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে নিলাম প্রদানের নামে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটচক্র লাভবান হলেও সাধারন বারকী শ্রমিকরা ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে তারা মতপ্রকাশ করেন। তারা বলেন,সিন্ডিকেটচক্র নিজেরা প্রতিনিয়ত নদী হতে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা বালি পাথর উত্তোলন করে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরান শাহরীয়ার বলেন,আমরা মাইকিং করে নিলাম প্রদান করেছি। এখানে আমাদের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। আমরা সরকারী রাজস্ব আদায়ের স্বার্থেই এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি।

দৈনিক দেশতথ্য//এল//