Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 7:07 pm

সুনামগঞ্জ জেলা আ.লীগের সম্মেলন ১১ ফেব্রুয়ারি : কারা হচ্ছেন সভাপতি সম্পাদক

নেতৃত্বের উত্থান বিকাশ পতন অত:পর পুনরুত্থানের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৭ বছর পর আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে। পরে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।
গত ২০ জানুয়ারি বিকেলে সম্মেলনের তারিখের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। তিনি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ঐ তারিখেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় জেলা কমিটিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এ দিকে সুনামগঞ্জের তিন টি উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন হলেও বাকি ৯ টি উপজেলার সম্মেলন এখনও ঝুলে আছে। দিরাই’র সম্মেলন চলাকালীন অবস্থায় বিদ্রোহী ও অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগেরই একটি পক্ষ হামলা চালায় মে থাকা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপর। পরে ঘন্টা দুয়েক সম্মেলনের কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর আবারও শুরু হয় সম্মেলন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতারাই বলছেন স্থানীয় কোন্দল গ্রুপিং এর কারণেই সম্মেলন গুলো সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এখন জেলার সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছেন নেতা কর্মীরা। কেন্দ্র থেকে অনেকেই বিভিন্ন সূত্রে সম্মেলনের তারিখ জেনে নিজের পদ ভাগিয়ে নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তা নানান কারণ দেখিয়ে স্থগিত করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে হচ্ছেন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও অতি সংগোপনে উপজেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকদের সাথে যোগাযোগ করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন পদ প্রত্যাশীরা। কেউ কেউ দলীয় সভানেত্রীর আস্থার উপর বিশ্বাস রেখে বসে আছেন। কেউবা ভরসা করছেন ভাগ্যের উপর। তবে সবাই চাচ্ছেন এবারের সম্মেলনে জামাত-বিএনপির সাথে সম্পর্কীত নেতা,বাণিজ্যিকভাবে লাভবানকারী স্বার্থান্বেষী ভোগবাদী সুযোগসন্ধানী নেতা,দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রীড নেতা,অতি বিদ্রোহী ব্যক্তি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ও সিন্ডিকেটমুক্ত ত্যাগী বি ত পরিক্ষিত নেতারা যেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন। আবার কেউবা বলছেন,কাউকে রেখে বা কাউকে বাদ দেয়ার দরকার নেই সকলকে নিয়ে বিশেষ করে জামাত,বিএনপি,জাসদ,বাসদ,জাপা,ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আগত অতীত বর্তমানের সকল অনুপ্রবেশকারী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে জেলা আওয়ামীলীগের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলা হউক। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন,মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা বললেও মাঠ পর্যায়ে অনেক সময় দেখা গেছে ৭১ এর রাজাকার,আলবদর এবং শান্তি কমিটির বড় বড় নেতাদের সন্তানদেরকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের আর্থিক অবস্থান ও সম্প্রীতির রাজনীতির দোহাই দেয়া হলেও বগলে ইট আর মুখে শেখ ফরিদ চরিত্র প্রকাশ করে আওয়ামীলীগকে যারা কলুষিত করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা দরকার বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাগরিকবৃন্দ।

সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা,সাংবাদিক এবং মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদের প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বর্তমান সভাপতি ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান,পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম.এ মান্নান এমপি,জননেতা মুহিবুর রহমান মানিক এমপি,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট,সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডন,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট খলিলুর রহমানের সুযোগ্য পুত্র ও বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন প্রমুখ। তবে কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ ডনের অনুসারীদের কয়েকজন বলছেন,ডন নিজে থেকে কোন পদের জন্য লালায়িত নন। নেত্রী স্বয়ং শেখ হাসিনা যদি তাকে এ পদে নিয়োগ করেন তাহলে তিনি কেবল সভাপতি পদে দায়িত্ব নিতে পারেন। আলহাজ্ব মতিউর রহমানের অনুসারীরা বলেন, সাবেক এমপি আব্দুজ জহুর সাহেব যেমন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তেমনি আলহাজ্ব মতিউর রহমানও আমৃত্যু সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে তাঁর চাইতে সিনিয়র ও প্রবীণ আর কোন নেতা বর্তমানে সুনামগঞ্জে নেই। পরিকল্পনা মন্ত্রী আলহাজ্ব এম.এ মান্নান এর অনুসারীরা বলেন, উন্নয়ন ও প্রশাসনের কাছে দলকে গ্রহনযোগ্য গড়তে হলে এম.এ মান্নান এমপিকে সভাপতি করা দরকার। নুরুল হুদা মুকুটের অনুসারীরা বলছেন,দলকে শক্তিশালী করতে হলে সভাপতি হিসেবে নুরুল হুদা মুকুটের কোন বিকল্প নেই। মুহিবুর রহমান মানিক এমপির অনুসারীরা বলছেন,সিলেট বিভাগে সংসদীয় আওয়ামী রাজনীতিতে একাধারে ৪ বারের নির্বাচিত সাংসদ মানিক। তিনি জননেতা থেকে এখন গণমানুষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। ত্যাগের রাজনীতির মূল্যায়ন করে জনবান্ধব আওয়ামীলীগ গড়ে তুলতে তাকে সভাপতি পদ প্রদান করা উচিত। অন্যদিকে দলকে তারুণ্যনির্ভর চ্যালেঞ্জিং রাজনীতির মোকাবেলায় অবতীর্ণ করতে মূলধারার নেতাকর্মী হিসেবে এডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটনের পক্ষে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে অনেককে অভিমত ব্যক্ত করতে শুনা গেছে। সাধারন সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন যোগ্য দক্ষ ও বলিষ্ট নেতৃত্বের অধিকারী বলে অনেকেই মতামত প্রকাশ করেছেন। দলের সভাপতি ও সম্পাদক দুটি পদের যোগ্যতাই তার মধ্যে রয়েছে বলে বিভিন্ন উপজেলা,ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিমত প্রকাশ করেন। আকস্মিক কোন কারণে সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন করা হলে এ পদে বর্তমান সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন, জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক করুনাসিন্দু চৌধুরী বাবুল ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সফল সভাপতি এডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম কে সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষিক্ত করা যেতে পারে বলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন।

গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন শহরে গিয়ে বড় নেতাদের গ্রুপিং ও ব্যাকেট রাজনীতি দেখতে দেখতে আমরা হতাশ। তাই যারা প্রকাশ্য গ্রুপিং রাজনীতির সূচনা করেছেন তাদেরকে সভাপতি বা সেক্রেটারী পদে দেখতে চাইনা। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে নেত্রী যাকে সভাপতি সেক্রেটারী মনোনিত করেন তাদেরকে নিয়েই জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে চাই। সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক পদে কারা নির্বাচিত হন সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।

দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//