শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা):
বনবিভাগের কঠোর নিরাপত্তা আর কড়াকড়ির মধ্যে শুরু হয়েছে সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুম।
বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে বাওয়ালীরা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২টি কুপে গোলপাতা আহরণ শুরু করেছে।
২৯ জানুয়ারী (রবিবার) থেকে প্রথম ট্রিপের গোলপাতা কর্তন শুরু হয়ে চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান।
তবে বনের ওপর চাপ কমাতে সুন্দরবন থেকে বনজদ্রব্য আহরণ সংকুচিত এবং চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বাওয়ালীরা গোলপাতা সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। গোলপাতা আহরণের ভরা মৌসুমে এবার বাওয়ালীদের বিএলসি (অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর ছিল বন বিভাগ। সর্বশেষ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২টি কুপ (জোন) থেকে ব্যবসায়ীরা অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবন অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে বনের উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবি মানুষেরা।
বাওয়ালীরা জানান, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এবার বন বিভাগর বনজসম্পদ আহরণে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তারা বলছেন, বাওয়ালীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এবার গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন খুচরা গোলপাতা ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে গোলপাতার আগের মতো আর চাহিদা নেই। বিক্রি কম হওয়ায় অনেকের আড়তে রয়ে গেছে গতবারের পুরনো গোলপাতা। তাছাড়া গোলপাতায় ঠিক যে পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেন সে তুলনায় লাভ অনেক কম।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) স্টেশন অফিসার মো. ওবায়দুর রহমান জানান, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে দুটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। একটি হলো শ্যালা গোলপাতা কূপ অপরটি চাঁদপাই গোলপাতা কূপ।
বাওয়ালীরা সুন্দরবনে যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা কাটতে পারে তার জন্য বন বিভাগ থেকে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য বনজদ্রব্য আহরণ সীমিত করা হয়েছে। তিনি প্রতিটি কুপে নিয়মিত তদারকি করে বিএলসি নবায়ন করার অনুমতি দিয়েছেন। পাশাপাশি কুপে নৌকার মিল রেখে গোলপাতা কাটার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, গোলপাতা আহরণের ক্ষেত্রে এবার বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, গোলপাতা আহরণের সময় বনের অন্য কোনো ধরনের গাছপালা কাটা যাবে না, গোলপাতা আহরণের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় বনে অবস্থান করা যাবে না, নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করতে হবে, গোলপাতা ঝাড়ের মাইজপাতা ও ঠেকপাতা কোনোভাবেই কাটা যাবেনা এবং গোলপাতার আড়ালে যাতে কোনো ধরণের বনজদ্রব্য পাচার না হয় সে বিষয়টি নিবিঢ়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। কোনো বাওয়ালি গোলপাতার পাশাপাশি অন্য যেকোন প্রজাতির গাছ কাটলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন বিভাগের সুত্র জানায় ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গোলপাতা আহরণ মৌসুম চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ মৌসুমে শ্যালা কূপ থেকে চার হাজার মেট্রিক টন ও চাঁদপাই কূপ থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে প্রতি কুইন্টাল গোলপাতা আহরণে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ টাকা। আর এবার তা বাড়িয়ে প্রতি কুইন্টাল ৬৮ টাকা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post