Print Date & Time : 24 April 2025 Thursday 6:14 pm

সেচ না পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শংকায় 

নিজস্ব প্রতিবেদক \ দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ জিকে পাম্প হাউজের তিনটি পাম্পই অকেজো হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেচ সরবরাহ। এতে চলতি বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদাহ ও মাগুড়া ৪জেলার ১৩টি উপজেলার সেচ প্রকল্পাধীন এলাকার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমত্রা অর্জন ব্যহত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। 

সেই সাথে এমৌসুমে কাঙ্খিত প্রায় দেড় লক্ষ মে:টন ধান উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পানি শুন্যতায় মাঠের পর মাঠ ফেটে চৌচির। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে খাদ্য শস্য উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি এসব কৃষক পরিবার জীবন ধারণে এক অনিশ্চি সংকটে মুখে দাঁড়ানোর শংকায় দিন গুনছে এসব এলাকার চাষী পরিবার। সেচ প্রকল্প মেরামত ও বিকল্প ব্যবস্থাপনায় সমস্যা সমাধানে প্রকল্প গ্রহনের কথা জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খাদ্য শস্য উৎপাদন অব্যহত রাখতে ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের পরামর্শ কৃষি বিভাগের। 

সেচ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বিপাকে চাষীরা নিজেদের ভোগান্তি ও দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে সেচসরবরাহ চালুর দাবি করেন চাষীরা। মিরপুর উপজেলার কবরবাড়ি গ্রামের খালেক মন্ডল (৭০) বলেন, ‘এই দ্যাকেন মাটে ধান জর্মাতে পারতিসনি, ধানের জমি সব পইরি পইরি আচে, চারা আতালিই(বীজতলা) র’চে, একন আমরা পানি চাচ্চি, পানি আমার দিক, আল্লা দেচ্চে না, এই বান্দার হাতে যেটুক আচে, সিডা দিলিও তো আমরা বাঁচি’।

সদর উপজেলার জগতি গ্রামের চাষী বাসের আলী(৪৫)’র অভিযোগ, ‘আপনেরাই দ্যাকেন, এই যে মাঠের পর মাঠ পইরি আচে, পানি নাই, বোরিংএ পানি উটতেচ না, যে দুই একটাই উঠচে সিডাইও হাফ পরিমান পানি উঠতেচে’। অপর চাষী রাবুল সেখ(৫০) বলেন, ‘পানি বিহিন মাটে,  কোন ফসলই হচ্চে না, উরা (জিকে কর্তৃপক্ষ) আগে যদি বুুইলতি যে পানি দিতি পারবনানে, তালি আমরা আগেই অন্য বেবেস্থা কইরি নিতানে (নেয়া)’। বাড়–ইপাড়া গ্রামের চাষী গৃহকত্রী হাসিনা বেগম (৫৫) জানান, ‘পানির সেমেস্যা কি এট্টু আট্টিক হয়চ নাকি? এইযে আমরা গরীব মানুষ ৫হাজার ট্যাকা খরচ কইরি চারা দিছিলাম, পানি বিনি সে চারা লাগাতি না পাইরি একন কাইটি আনি গরুক খাওয়াচ্চি, একন আমরা এই ছাওয়াল পাল লিয়ে খায়ে বাঁচপো সেই ধানডাও একন হবিনা, কি খাবো তালি’ ? পানির আশায় থাকি আমার ফসলও বুনতি দিলি না, আবার ধানও লাগাতি পাল্লাম না, বাড়ির গরু বাচুর মুরগী পাখির খাওয়ার পানিরও সেমেস্যা হয়ে গেচে। বোরিংএও পানি ওটতেচ না টিউকলেও পানি ফেল করেচে, আমারে বাঁচাই দায় হয়ে গেচে’। 

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামার বাড়ি কুষ্টিয়ার উপপরিচালক সুফি মো: রফিকুজ্জামান জানান, ‘চলতি বোরো মৌসুমে জেলাতে ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়। কিন্তু এবছর জিকে সেচ প্রকল্পের সেচ সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেচ এলাকাধীন ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন ব্যহত হবে। এতে প্রায় ৭৭ হাজার মে:টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতির শংকা থাকবে’। তবে পরবর্তী আমন মৌসুমে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার কথা জানালেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সেচ সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, ‘বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়া সহ ৪জেলার ১৩টি উপজেলার সেচ সরবরাহ আওয়তাধীন ৯৫ হাজার ৬শ ১৬ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এবছর উল্লেখিত ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করতে চাইলে চাষীদেরই অন্যকোন বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে’।  

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রশিদুর রহামান জানান, ‘দেশের বৃহৎ এই সেচ প্রকল্পটি মেরামত ও পূর্ননির্মান করে চালু করতে প্রকল্প গ্রহন ও প্লানিং কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পটির যাচায় বাছায় শেষে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। একই সাথে বিদ্যমান সেচ সংকট থেকে কৃষকদের মুক্ত করতে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবছে সরকার’ 

কেবলমাত্র ফাইল বন্দি প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নই এই সংকট মোকাবিলার একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী জেলাবাসী। 

খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২ এপ্রিল ২০২৪