Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 5:54 pm

সৈয়দপুরে বেতনের দাবিতে রেল শ্রমিকদের কর্মবিরতি

নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদানের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তারা এই কর্মসূচি পালন করছে। শ্রমিকরা মেশিন আর কর্মকর্তারা কলম চালানো বন্ধ রেখেছে। এতে সর্বাত্মক অচলাবস্থায় পড়েছে কারখানার উৎপাদনসহ সকল কর্মকান্ড। বিগত আগস্ট মাসের মজুরী পাচ্ছেনা বলে তারা এই পথ বেছে নিয়েছেন। 

শ্রমিকরা জানান, পুরো মাস তারা নিয়মিত কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করলেও এমাসে বেতন ভাতা দিতে গড়িমসি করছেন। ফলে তারা বেতন না পেয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। মাসের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও চলতি মাসের ৫ তারিখ পেরিয়েও কোন সুরাহা না হওয়ায় অর্থাভাবে বেসুমার অসুবিধার সম্মুখিন হয়েছেন। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার সমাধানের আশ্বাস না দেয়ায় ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। 

তারা বলেন, শ্রমিকরা নিয়মিত প্রতিমাসের ২২ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত এবং কর্মকর্তারা ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে বেতন ভাতা পায়। কিন্তু গতমাসের বেতন আজও পায়নি। ফলে স্বাভাবিক ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা এমন কর্মসুচি দিয়েছেন। এতে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে কর্মকর্তারাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এমনকি কারখানার বাইরে ওপেন লাইন শাখাসহ হিসাব বিভাগ, রেলওয়ে স্কুল, হাসপাতালসহ সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের অন্যান্য অফিসসমুহের চাকুরীজীবিরাও এই ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ সপের কর্মচারী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণত যে সময়ে প্রতিমাসে বেতনের টাকা একাউন্টে আসে। এবার তা আসেনি। একারণে সোমবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত শ্রমিক কর্মচারীরা কাজে হাত দেয়নি। পরে ডাব্লুএম এসে তাদের দ্রুততম সময়ে বেতন ভাতার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়ায় তারা কর্মে যোগ দেন বলেই আমি জানি। রেলওয়ে একাউন্টস অফিসের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

এ ব্যাপারে রেলওয়ে কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক (ডাব্লু এম) শেখ হাসানুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, কর্মবিরতির কোন খবর আমার জানা নেই। তারা অফিসিয়ালী কোন কর্মসূচী দেয়নি বা আমার কাছেও কেউ আসেনি। তাই এ ব্যাপারে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। তবে বেতন ভাতা না পাওয়ায় তারা একটু মনক্ষুন্ন আছেন। বেতন ভাতা কেন পাচ্ছেনা শ্রমিক কর্মচারীরা? 

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা মূলতঃ একাউন্ট্স অফিস বলতে পারবে। তবে জেনেছি যে, তারা বাজেট না পাওয়ায় এবং তাদের অফিসের সরকারী কোন আদেশ না থাকায় বেতন সংক্রান্ত কোন কাজই করছেনা সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আমরা যথারীতি সময়মতই কারখানার বেতন ভাতার চাহিদা প্রেরণ করেছি। সেটা একাউন্টস অফিস বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর পর বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়া হয়। 

সৈয়দপুর রেলওয়ে একাউন্টস অফিসের ডিপুটি এফএএন্ডসিএও (কারখানা) সাইফুল ইসলাম বলেন, মুলতঃ সরকারী নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব বিভাগের সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, পাকশী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাহারতলী বিভাগের একাউন্টস অফিস সমুহের কোন কার্যকারীতা বর্তমানে নেই। তাই এই অফিসগুলোর অন্তর্র্ভূক্ত সকল ওয়ার্কসপ, ওপেন লাইন ও অফিসসমুহে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতন ভাতাসহ সকল প্রকার হিসেব সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের অফিস অবকাঠামোগতভাবে থাকলেও বর্তমানে নীতিগতভাবে নেই। তাই বাজেট বরাদ্দ আসছেনা। একারণে আমরারও বেতন ভাতা পাচ্ছিনা। তবে সরকারী চাকুরী করার কারণে যথানিয়মে ৯ টা-৫টা অফিস করছি। কিন্তু কোন অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছেনা। একারণে রেলওয়ের প্রতিষ্ঠানসমুহের চাকুরীজীবিদের বেতন ভাতা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা। এটা রেলওয়ের ডিজি এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারাই সমাধান পূর্বক নির্দেশনা দিলে সে অনুযাযী চলমান সংকটের সুরাহা করা হবে। নতুবা আমাদের পক্ষে আর কিছুই করার নেই। 

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকলীগ সভাপতি, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভ্পাতি মোঃ মোখছেদুল মোমিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। এখানে একাউন্টস অফিস যে বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ার কথা বলছেন তা আদৌ সঠিক নয়। তারা নিজেরা কর্মবিরতি করায় বেতন বিল তৈরীর ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

এবি//দৈনিক দেশতথ্য//সেপ্টম্বর ৫,২০২২//