শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের পিতা-মাতা দেখিয়ে ভোটার হওয়া আলোচিত সোনালী খাতুনের ভোটার ফরম সংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষরের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্তর বিরুদ্ধে দুষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভুক্তভোগী দুইজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউপি সদস্য আকবর আলী এবং বুধবার ১৪ ডিসেম্বর আনছার বাহিনীর সদস্য হাসান আলী লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সন্তোসপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কুটি নাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক ও জমিলা বেগম দম্পতি। তাদের বড় ছেলে আনিছুর রহমানের স্ত্রী সোনালী খাতুন তার পিতা-মাতার পরিবর্তে শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ভোটার হয়েছেন।
তিনি ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদের সময় ভোটার ফরম নং-২৯০৯৪৫৮৪ এবং ভোটার এলাকা নং-০১৬৮নাম্বারে ভোটার হন। সেই ফরমে যাচাইকারী ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক দুই বারের ইউপি সদস্য আকবর আলী এবং একই ওয়ার্ডে বাসিন্দা আনছার বাহিনীর সদস্য হাসান আলীকে সনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়। সেখানে তাদের দু’জনের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং স্বাক্ষর দেয়া হয়। অথচ বিধি অনুযায়ী ভোটার তথ্য ফরমের যাচাইকারী কলামে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং সনাক্তকারীর হিসেবে প্রতিবেশির জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ও স্বাক্ষর থাকার নিয়ম। কিন্তু ভোটার তালিকা তথ্য সংগ্রহকারী নাখারগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আশরাফ আলী খন্দকার ভুক্তভোগীগণের স্বাক্ষর জাল করে ফরম পূরণ করেছেন। তার এমন কর্মকান্ডে ভুক্তভোগীরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তারা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক দুই বারের ইউপি সদস্য আকবর আলী বলেন, আমার বিষয়টি জানা ছিল না। কিছুদিন আগে থানা থেকে এক কর্মকর্তা সোনালী খাতুনের বিষয়ে তদন্ত করতে আসলে জানতে পারি। সেখানে যাচাইকারী হিসেবে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। তাই এই ঘটনায় আমি উপজেলা নির্বাচন অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার সাথে জড়িত আশরাফ আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আনছার বাহিনীর সদস্য হাসান আলী বলেন, সোনালী খাতুনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না। কিন্তু এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জানতে পারি সোনালী খাতুনের ভোটার হালনাগাদ ফরমে সনাক্তকারী হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেয়া আছে। সেই স্বাক্ষর দেখি জাল করা হয়েছে। সোনালী খাতুনের বাড়ি থেকে আমার বাড়ি এক কিলোমিটার দূরে। কিভাবে আমি তার প্রতিবেশি হয়ে স্বাক্ষর করবো? যে আমার স্বাক্ষর জাল করেছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান তিনিও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আশরাফ আলী ব্যক্তিগত জীবনে জামায়েত পন্থি সর্মথক। তিনি সোনালী খাতুনের স্বামী আনিছুর রহমানের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি কোচিং বাণিজ্যের সাথেও জড়িত। তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের জোড় পূর্বক কোচিং করাতে বাধ্য করেন। তার কোচিংয়ে না পড়লে সেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন। যারা তার কোচিংয়ে পড়েন তাদেরকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে দেন।
স্বাক্ষর জালের ঘটনা অস্বীকার করে আশরাফ আলী বলেন, প্রায় ৮/১০ বছর আগের করা স্বাক্ষর কি এখনো একই স্বাক্ষর হবে বলে প্রশ্ন তোলেন? কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রংপুরে নির্বাচন কাজ শেষ করে এসে উদ্ধর্ধন কর্তৃপক্ষ জানাবেন এবং সেই হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক দেশতথ্য/এসএইচ//