শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম:প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এমপির পুত্র সাফায়াত বিন জাকির (সৌরভ) এর বিবাহ উত্তোর বৌ-ভাতের দাওয়াত পালনের জন্য রোববার রৌমারী রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘোষনা করা হয় সাধারণ ছুটি। এ নিয়ে বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
বিব্রত পরিস্তিতিতে পড়েছে প্রশাসন জানাযায় শিক্ষকদের বাধ্যতামুলক দিতে হয়েছে ৫০০টাকা করে চাঁদা। এক হাজার তিন শত শিক্ষকের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৬লাখ টাকা। এ টাকায় ফ্রিজ, স্বর্ণসহ দেয়া হয় দামী দামী উপহার।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম নিজেও মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াত পালনের কথা স্বীকার করে বলেন, এই তিন উপজেলায় শৈত্য প্রবাহ বিদ্যমান থাকায় কোমলমতি শিশুদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সংশিস্নষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন নিজেদের ক্ষমতায় একদিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষনা করেছেন। প্রধান শিক্ষকগন বছরে ৩দিন ছুটি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেই সংরক্ষিত ছুটি থেকে আজকের ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষা বিভাগ অবহিত আছে।
তবে অফিসিয়ালী কেউ স্বীকার করছেন না যে মন্ত্রী মহোদয়ের ছেলের বিয়ে উৎসবের কারণে এ সাধারণ ছুটি। শিক্ষার্থী অভিভাবকরা বলছেন অজ্ঞাত কারনে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ঝুলছে তালা। শিক্ষকেরা বলছেন প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে স্কুল ছুটি। এসব নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ৮ জানুয়ারী রবিবার সরকারী ছুটির দিন না থাকলেও অজ্ঞাত কারনে চিলমারী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ঝুলছে তালা। অভিযোগ উঠছে কোন দিবস বা জরম্নরী কারন ছাড়াই বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন কারন দেখালেও এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা বলছে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বন্ধ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন রোববার মজাইডাঙ্গা সরকারী প্রাঃ বিদ্যাঃ, দক্ষিণ রাধাবলস্নভ, রাণীগঞ্জ বাজার, ফকিরেরহাট, খালেদা শওকত পাটওয়ারী, চর খরখরিয়া, নিরিশিং ভাজ, রানীগঞ্জ মদন মোহন, খরখরিয়া ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। সকল প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে ফোনে কথা হলে অনেকে বলেন, শৈত্য প্রবাহের কারনে আবার অনেকে বলেন সংরক্ষিত ছুটি আবার কেউ কেউ স্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী ছেলের বিয়ের দাওয়াতের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কোন শিক্ষকেই নিজের নাম পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।
ফকিরেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী বিপুল, আমির হোসেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ে এই জন্য বন্ধ দেয়া হয়েছে।
মদন মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার অভিভাবক দিলিপ কুমার ক্ষোভের সাথে বলেন, শিক্ষক খুঁজতে আইছেন তাহলে রৌমারী যান। আজ কোন শিক্ষককে বিয়ের বাড়ি ছাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ বিয়েতে অংশ গ্রহন বাধ্যতা মুলক। আর এ জন্য শিক্ষকদের চাদাও দিতে হয়েছে জন প্রতি ৫০০টাকা। আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রহমান বলেন, এটা কেমন কথা প্রতিমন্ত্রীর ছেলে বিয়ের জন্য কি সকল স্কুল বন্ধ রাখতে হবে? এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? দেশে আইন কানুন কিছুই নেই?
চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার বলেন, আমি রৌমারীতে মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতে আছি। এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো।
চিলমারী উপজেলা সরকারি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক আনছারী স্বীকার করেন, শিক্ষা অফিসারের সম্মতিতে প্রধান শিক্ষকগণ স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত ছুটি থেকে একদিনের জন্য সাধরণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। সকল শিক্ষক চাঁদা তুলে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, তিন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি চলছে তা তিনি অবহিত হয়েছেন। তিনি বিস্তারিত খোজ খবর নিচ্ছেন বলে জানান।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post