এই পদ্মার রাক্ষুসি ঢেউ কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে তা কেবল জানে সন্তানহারা মা। জানে স্বামীহারা স্ত্রী। জানে পিতৃহারা সন্তান। জানে ভাইহারা বোন।
গ্রেটার বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুর আমার জন্মভূমি। উচ্চতর শিক্ষা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে জীবনের অনেক দীর্ঘ সময়ের বড় একটি অংশ। ছুটি পেলেই স্রোতস্বীনি পদ্মা পাড়ি দিয়ে কতবার যে বাড়ি গিয়েছি আর এসেছি এর কোন হিসেব নেই।
পদ্মা নদীর ঘাট যে বিড়ম্বনা দিয়েছে তা কেবল ভূক্তভুগীরাই জানেন। নদী পার হতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি ঘাটে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ নদী বহুবার পার হয়েছি। ঢেউয়ের তান্ডবে পড়ে বহুবার ভেবেছি হয়তো এ নদীতেই আজ হবে সলিল সমাধি।
কেউ কেউ প্রশ্ন করেন সেতু হওয়ায় এখন স্বল্প সময়ে বাড়ি যেতে পারবেন কি? সে পারি আর না পারি সময়ের দুর্ভোগ তো কমবে। কঠিন বিড়ম্বনা থেকে তো মুক্তি পাবো। মাঝ পদ্মায় ঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া থেকে তো মুক্তি পাব।
এই পদ্মার রাক্ষুসি ঢেউ কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে তা কেবল জানে সন্তানহারা মা। জানে স্বামীহারা স্ত্রী। জানে পিতৃহারা সন্তান। জানে ভাইহারা বোন।
আপন জন হারানো কত মানুষকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করতে দেখেছি। দেখেছি সন্তান হারিয়ে মা চিরদিনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। স্বামী হারিয়ে স্ত্রী কেঁদে কেঁদে জীবন বরবাদ করে দিয়েছেন।
আবার কত যুবক সময় মতো পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছতে না পেরে স্বপ্ন ভেঙ্গে ফেলেছে। আবার অসুস্থ মাকে নিয়ে সময় মতো এম্বুলেন্স পার করতে না পেরে পদ্মার তীরেই চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সারা জীবনই এ পদ্মা তার কাছে অভিশপ্ত হয়ে থাকবে।
পদ্মার তীরে এসে পারের আশায় সারা দিন কাটিয়েছি বহুবার। সকাল ৭টায় সায়েদাবাদ থেকে গাড়িতে ওঠে দু’ঘন্টায় মাওয়া পৌঁছলেও ফেরিতে ওঠতে পেরেছি সন্ধ্যার পর। গভীর রাতে বাড়ি পৌঁছেছি বহুবার। আবার সকালে রাজাপুর থেকে রওনা করে এসে ঝড়ের কারণে ফেরি বন্ধ থাকায় সারারাত পদ্মার পাড়ে কাটিয়েছি। যা এখনও মনে হলে আতঁকে উঠি।
আগামী ২৫ জুন সেই মহেন্দ্রক্ষণ। চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। আমাদের জীবন যেন আলো ফিরে এলো। আমরা যেন নতুন জীবনের স্বাদ খুঁজে পেলাম। সেতুর কল্যাণে আমাদের আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয়াবহ ঝড়ে পদ্মা পাড়ি দিতে হবে না। অনিশ্চিয়তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পদ্মার তীরে বসে থাকতে হবে না। বাঁধভাঙা আনন্দ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নকারী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা চিরকৃতজ্ঞ মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।