গোফরান পলাশ, কলাপাড়া: ঘূর্নিঝড় ’মোখা’ আতঙ্কে র্নিঘুম রাত কাটিয়ে আজ রবিবার বিকেল ৪টার দিকে রোদের দেখা মেলায় স্বস্তি ফিরে পেল উপকূলবাসী।
শনিবার পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের তথ্য জোরে সোরে উপকূলে প্রচারের পর সবারই দৃষ্টি ছিল সমুদ্র ও নদীর দিকে। সমুদ্রের ঢেউয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কতটা উম্মাদনা বেড়েছে, কতটুকু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে নদীতে কিংবা বাতাসের গতিবেগ কতটা বেড়েছে, কখন আঘাত হানবে উপকূলে? এ গুলোই ছিল উপকূলের সাধারন মানুষের আলোচনার বিষয়। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখা যায়নি উপকূলবাসীর মধ্যে। সন্ধ্যে নাগাদ দু’চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে দু’একশ মানুষ ও ক’টি মুজিব কেল্লায় কিছু গবাদি
পশুকে দেখা গেলেও আজ সকাল হওয়ার পর সব কিছু পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক বলা চলে।
এর আগে শনিবার সকাল থেকেই সমুদ্র সৈকত থেকে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও থানা পুলিশের সদস্যদের পর্যটকদের সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। কুয়াকাটার সকল হোটেল, মোটেল, রিপোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ঘূর্নিঝড় আঘাত
হানার খবরে আতংক বিরাজ করে ঝুঁকিপূর্ন বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারীদের মাঝে। তবে তাদের কাউকেই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেতে দেখা যায়নি। সম্ভাব্য ঘূর্নিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পাপাশি কন্ট্রোল রুম খোলে পায়রাবন্দর
কর্তৃপক্ষ। বন্দরের চ্যানেলে থাকা ৩ টি মাদার ভ্যাসেল ও বেশ কিছু লাইটার
জাহাজ নিরাপদে সরিয়ে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ৭০৩টি আশ্রয়
কেন্দ্র,৪০টি মুজিব কেল্লা, ৮হাজার ৫৭০ জন সিপিপি সদস্য ও ৭৬ টি মেডিকেল
টিম প্রস্তুত রাখা হয়। জেলা সদরসহ সকল উপজেলায় কন্ট্রোলরূম খোলা হয়।
এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তাৎক্ষনিক দূর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তায়
৪০০টন চাল, ২লাখ খাবার স্যালাইন, ৪ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও নগদ ৮
লাখ ২২হাজার টাকা মজুদ রাখা হয়। ঝঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ জরুরী মেরামত ও নলকুপ
গুলোতে লবন পানি প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেয়াসহ উপজেলা প্রশাসন, অইন শৃংখলা
বাহীনি, ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও বিদ্যুত বিভাগকে দ্রুত সেবা দিতে
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল নিয়ে সার্বক্ষনিক পস্তুত রাখা হয়। জেলা
প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের জনসাধারনের পাশে দাড়াতে দেখা যায়।
স্থানীয় সাংসদ অধ্যক্ষ মো: মহিববুর রহমানকে দেখা গেছে দলীয় নেতা-কর্মীদের
সাথে নিয়ে ঝূঁকিপূর্ন এলাকা সমূহ, মৎস্যবন্দর, জেলেপল্লী ও দূর্গত
মানুষের জন্য খোলা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে সাধারন মানুষের খোঁজ খবর
নিতে এবং ঘূর্নিঝড় ’মোখা’ মোকাবেলায় দায়িত্বপালনরত সরকারী, বেসরকারী ও
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দিতে।
স্থানীয় আবহাওয় অধিদপ্তর ও সিপিপি সূত্র জানায়, অতিপ্রবল ঘূর্নিঝড় ’মোখা’
রবিবার অপরাহ্নে পায়রাবন্দর থেকে ২৪৫ কি.মি. দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব দিকে
অবস্থান করছিল। ঘূর্নিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এলাকার মধ্যে বাতাসের
গতিবেগ ছিল প্রতি ঘন্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কি.মি.। এটি আজ সকাল ৯টার দিকে
ভাটার সময় টেকনাফ সীমান্ত উপকূল দিয়ে মায়ানমার উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
যা সন্ধ্যা নাগাদ অতিক্রম শেষ করতে পারে। এর প্রভাবে উপকূলে আরও দু’একদিন
বৃষ্টি ও দমকা বাতাস হতে পারে। নদ নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট
বৃদ্ধি পেতে পারে।
কলাপাড়া ইউএনও মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা এখন অনেকটা শঙ্কামুক্ত
অবস্থানে আছি। ঘূর্নিঝড় পরবর্তী সময়ে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে
কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের কৃষি ও মৎস্য খাতে এর তেমন কোন বিরুপ প্রভাব
পড়বেনা। কেননা ঘূর্নিঝড়ের সম্ভাব্যতায় সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারনায়
আমাদের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে।
স্থানীয় সাংসদ অধ্যক্ষ মো: মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্নিঝড় ’মোখা’
মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দলীয়
নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ঝূঁকিপূর্ন এলাকা সমূহে সার্বক্ষনিক অবস্থান
নিয়েছি। দূর্গত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে আশ্রয়
কেন্দ্র, মুজিব কেল্লা, মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা, খাবার সহ কার্যকর সকল
পদক্ষেপ নিয়েছি। আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী উপকূলে
ঘূর্নিঝড় আঘাত হানেনি। ঘূর্নিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও আমাদের
প্রস্তুতি রয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post