স্ত্রী এক শিক্ষকসহ একাধিক ব্যাক্তির সাথে পরোকিয়া করে। তাকে ধরার জন্য কলেজ শিক্ষক বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসায়। এতে সে স্ত্রীর পরকীয়া দেখে ফেলে। এ নিয়ে স্ত্রীকে বাধা দিলে স্ত্রী তাকে বাড়ি লেখে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। শিক্ষক তা না করায় তাকে ওই স্ত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। কে জানতো যে, ওই সিসি ক্যামেরায় দেখা দৃশ্যের জন্য তাকে আত্মহত্যা করতে হবে!

স্বামীকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় এক স্ত্রীকে হাজতে পাঠিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত। ওই স্ত্রীর নাম সাবিনা ইয়াসমিন তাপু (৫০)।
জানা গেছে দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গার নূরুজ্জামান বিশ্বাস কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহুরুল ইসলামের আত্মহত্যা করে ছিলেন। তাকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করার অভিযোগে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন তাপু (৫০) আজ (২৩ জুন) বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-২ দৌলতপুর আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তিনি জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আদালত ও পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আল্লারদর্গা নূরুজ্জামান বিশ্বাস কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম আল্লারদর্গা বাজারের পার্শ্ববর্তী হাইস্কুল সংলগ্ন চামনাই এলাকায় জমি কিনে একতলা ভবন নির্মাণ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন তাপু পূর্ব থেকেই মথুরাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ একাধিক ব্যাক্তির সাথে পরোকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলামের সন্দেহ হলে সে তার স্ত্রী তাপুকে উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে তার বাবার বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত রাখেন এবং নিজ বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসান। আর এই সিসি ক্যামেরা তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ঘটনাচক্রে একদিন কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলাম তার স্ত্রী তাপুকে মথুরাপুর হাইস্কুলের এক শিক্ষকের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। কিন্তু দু’টি সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে ও আত্মসম্মানের কথা ভেবে স্ত্রী তাপুকে তালাক না দিয়ে সংসার করতে থাকেন।
বাবার বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তাপু ও তার ভাই এবং পরোকিয়া প্রেমিক ওই স্কুল শিক্ষক ও তার অন্যান্য বোনদের কুপরামর্শে তার স্বামী জহুরুল ইসলামকে বাড়ীর জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। জমি রেজিস্ট্রি করে না দিলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় তারা। তাপু বাবার পরিবারের সদস্যদের উপর্যুপরি চাপ ও হত্যার হুমকিতে কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলাম মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হোন।
আত্মহত্যার পূর্বে ২০২১ সালের ৯আগষ্ট কলেজ শিক্ষক জহুরুল একটি সুইসাইড নোট লিখে যান। যাতে লেখা রয়েছে, ‘বউয়ের দ্বারা এতো অপমান সহ্য করে তার মত মহিলার সাথে সংসার করা সম্ভব হলো না। তাপুর স্বামীর দরকার নাই, সে চায় বাড়ী। আমি তাদের সবকিছু দিলাম শেষ পর্যন্ত আমার জীবনটাও দিলাম। স্বামীর প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে তার সাথে কিসের সংসার। আমার মৃত্যুর জন্য তাপু এবং তার পরিবার দায়ী’।
এ ঘটনায় প্রয়াত কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলামের ছোটভাই দৌলতপুর কলেজের শিক্ষক আহাদ আলী নয়ন বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করতে যান। তৎকালীন দৌলতপুর থানার ওসি থানায় মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করতে বলেন।
পরবর্তীতে আহাদ আলী নয়ন বাদী হয়ে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার পড়ে পিবিআই’র উপর।
কুষ্টিয়া পিবিআই’র এসআই রফিকুল ইসলাম রফিক দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতের কাছে ৭১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে আসামী সাবিনা ইয়াসমিন তাপুর মথুরাপুর হাইস্কুলের এক শিক্ষকের সাথে পরোকিয়া সম্পর্কের সত্যতা পান এবং কলেজ শিক্ষক জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন।
এামলার বাদী আহাদ আলী নয়ন জানান, আমি ও আমাদের পরিবারের সকলে বিজ্ঞ আদালতের কাছে ভাই জহুরুল ইসলাম হত্যার প্ররোচনাকারী তাপুর সর্বচ্চ শাস্তি কামনা করি।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন,২৩,২০২২//