১৯৮৮ সালের আজকের এই দিনে শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন আমার পিতা ডা. এম এ কাসেম। আজ তাঁর ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকী। বেদনা বিধূর এই দিনটিকে পরম শ্রদ্ধা ভরে আমরা প্রতি বছরই স্মরণ করি। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বি ইয়া আনি ছাগীরা।
ডা. এম এ কাসেম ছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ডা. এম এ কাসেম ১৯২৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল দৌলতপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম পন্ডিত মরহুম বছির উদ্দিন বিশ্বাস।
ডা. এম এ কাসেম পরিশ্রমী ধর্মভীরু সাহসী কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষাবান্ধব আপাদমস্তক একজন সংস্কৃতিবান স্মার্ট সুপুরুষ ছিলেন। অত্যন্ত সৌখিনতায় পূর্ণ ছিলো তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন। আমাদের বাইক চড়ার মতো করে যৌবনে তিনি ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন। তাঁর কাছে কেউ আসলে তাকে কখনোই ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি ধর্মীয় গ্রন্থ সাহিত্য দেশি বিদেশী জার্নাল নিয়মিত কিনতেন এবং পড়তেন।
ডা. এম এ কাসেম ছিলেন পাকিস্তানের ফৌজি শাসক আইয়ূব খানের ঘোর বিরোধী। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও পাকিস্তানী সেনারা তাঁর বাড়ী আক্রমণ করেছিল। এরপর তিনি বড় ছেলেকে নিয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। সেখানে তিনি করিমপুরের নাটনা পাড়া ও জামশেদপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময়ের প্রখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও মিরপুর-ভেড়ামারা আসনের এমএনএ আব্দুর রউফ চৌধুরী তাঁকে গুরু বলে সম্বোধন করতেন। কুমারখালী-খোকসার এমএনএ গোলাম কিবরিয়া মেহেরপুরের এমএনএ ছহিউদ্দিন চুয়াডাঙ্গার এমএনএ ডা: আসাবুল হক ছিলেন তাঁর হরিহর আত্মার একান্ত রাজনৈতিক বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাঁর বাড়ি থেকে অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হতো। সেই বাড়িটি মিরপুর উপজেলার আমলায় ‘চেয়ারম্যান ভবন’ নামে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে তিনি মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় প্রত্যাখান করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের পরিচয় কোথাও ব্যবহার করেন নি। এই কারনে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর নাম নেই। তবে তাঁর রিক্রুটেড অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখনো নানা আসন অলংকৃত করে আছেন। তাঁর হাতে নিয়োগ পাওয়া শত মুক্তিযোদ্ধা আজো তাঁকে সশ্রদ্ধচিত্তে সন্মান জানায়। আমরা তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে গর্বিত।
ডা. এম এ কাসেম রাজনৈতিক ডামাডোল সামাজিক পরিবর্তণ স্বত্বেও তাঁর সাহসী ও বর্ণাঢ্য কল্যাণমূখী মানবিক জীবন বজায় রেখে চলেছেন। তাঁর কর্ম তাঁকে মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত করে রেখেছে। আমরা তাঁকে চরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশতের বাসিন্দা করে রাখেন এই দোয়া প্রার্থণা করছি।
এই প্রতিবেদনটির মূল অংশ পাঠিয়েছেন মরহুম ডা. এম এ কাসেমের পুত্র হাসান টুটুল। সম্পাদনা করেছে দৈনিক দেশতথ্যের ঢাকা অফিস।

Discussion about this post