সুদীপ্ত শাহীন, লালমনিরহাট: সুইপার সম্প্রদায়ের লোকজন এখন হোটেল- রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে খেতে পারবে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ হোটেল মালিকদের সাথে বৈঠকের পর নির্দেশনা দিয়েছে।
এই নির্দেশনার দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে। জেলায় হোটেল মালিক – রেষ্টুরেন্টে বাস্তবায়ন হয়নি।
আজ শনিবার সকালে লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সুইপার সম্প্রদায়ের মানুষ দলবদ্ধ হয়ে হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট গুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে। হোটেল মালিক ও অন্য সম্প্রদায়ের হোটেলে খেতে আসা কাষ্টমারগণ তাদের ( সুইপারদের) হোটেলে প্রবেশ করে খেতে দেয়নি।
এই নিয়ে চলছে শহর জুড়ে আলোচনার ঝড়। সাধারণ মানুষ ও হোটেল মালিকদের দাবি সম্প্রদায় বৈষম্য বা ধর্মীয় বৈঠম্যে সুইপারদের হোটেলে খেতে তারা বাধা দেয়নি। সুইপার সম্প্রদায়ের মানুষরা অপরিচ্ছন্ন পোশাক, মদ্যপ অবস্থায় থাকা ও সবসময় কুরুচিপূর্ণ অশ্লিল ভাষা কথা এবং নানা আচরণ গত কারণে হোটেল রেষ্টুরেন্টে সহঅবস্থানে খেতে পারে না। তাদেরও আচার আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের হরিজন (সুইপার) সম্প্রদায়ের লোকজনকে রেস্টুরেন্টের বাইরে বসে খেতে হয়। বিষয়টি অনভিপ্রেত, নিন্দনীয় ও মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্গন বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
লালমনিরহাটের সন্তান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম তার লালমনিরহাট নিজ শহরের বেড়াতে এসে দেখতে পায় শহরের মিশনমোড়ে হরিজন সম্প্রদায়ের ১টি পরিবারের মা- বাবা দুটি শিশু কে সাথে নিয়ে খাবার হোটেলের বাইরে মাটিতে বসে অত্যন্ত অমানবিক ভাবে খাবার খাচ্ছে। দৃশৗটি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে।
বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্ঠি গোচর হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন ঘটনাটির সরেজমিনে তদন্ত করে আগামী ২২ জানুয়ারীর মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরনের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্দেশনার পর জেলা প্রশাসক গত বৃহস্পতিবার বিকালে জেলায় সকল হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট মালিকদের সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক করেছে। সেখানে তিনি সকল হোটেল মারিকদের নির্দেশ দিয়েছে সুইপার ও হরিজনদে হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করে খাবার দিতে হবে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে শহর। ব্রিটিশ আমল হতে এই শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শহর, অফিস আদালত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্রিটিশরা এখানে হরিজন সম্প্রদায়কে আনে। হিন্দু ধর্ম মতে এরা নিম্ম বর্ণের জাত। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে।
জেলা হরিজন বাঁশপো সম্প্রদায়ের সভাপতি শ্রী রং লাল বাবু জানান, ভোটের সময় নেতা-কর্মীরা এসে একসাথে খায়। ভোট ফুরালে অন্য রকম আচরণ। তিনি বলেন, বাঁশফো, হরিজন, সুতার, রবিদাশ, ডোম, ডাওয়াই, চান্ডাল, চামার এরাও তো এক সময় হোটেলের বাহিরে খেত। এরাও নিম্ম বর্ণে । খেন তো শুধু সুইপার ছাড়া কেউ তো হোটেলের বাহিরে বসে খায় না। শুধু একটি সম্প্রদায়ের মানুসের মধ্যে বৈষম্য কেন?
শহরের মিশনমোড়ে চমক হোটেলের ম্যানেজার গোবিন্দ জানান, হোটেলের ভিতরে বসানো সম্ভব নয়। ওরা নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পোশাক, শরীওে দূর্গন্ধ ও মাতাল থাকে। নিজেদের মধ্যে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। তাদের আচরণগত পরিবর্তন হতে হবে। তা না হলে সাধারন কাস্টমাররা সুইপার ঢুকলে তারা ঢুকবে না। সমস্ত খাবার হোটেল বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের জন্য আলাদা হোটেল তৈরি করে তারাও ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। সমস্য কোথায় এই পরামর্শ দেয়। এক সময় এই দেশে হিন্দুদের পৃথক খাবার হোটেল ছিল। বড়বড় সাইন বোর্ড লেখা থাকত হিন্দু হোটেল। সেখানে নিরামিষ খেথে মুসলিমরাও যেত। সমস্যা তো কোন ছিল না। এখন সময়ের প্রয়োজনে নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম জানান, ঠান্ডায় খোলা আকাশে কৈলাশ বাঁশপো , হরিজন ও সুইপার সমপ্রদায় পরিবার নিয়ে মাটিতে বসে খাবার খাচ্ছি। ভাঙ্গা গেলাসে পানি , পত্রিকার কাগজে রুটি ও ভাজি । তাকে মর্মাহত করেছে। তাই বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনের নজরে নিয়ে আসতে ছবি পোস্ট করেছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহর সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চিঠি পেয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিটি হোটেলে গিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলেছি। আন্তরিকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হোটেল পৃথক স্থানি রাখবে। সেই সাথে হরিজনদেও বলা হযেছে হৈই হুল্লর করে খেতে না যেতে। বিষয়টি শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। এটি একটি দীর্ঘদিনে সামাজিক বিষয়। হুট করে পরিবর্তন আশা করাটাও কঠিন। লোকাল মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গিও বিষয় জড়িত।
উল্লেখ, সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশে ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্টি, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ ও জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাস্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। অভিযোগের বিষয়টি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্গন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//

Discussion about this post