হাটহাজারীর আনিস-মাসুদের নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা

মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ

‘পুরনো মামলার প্রতিশোধ’ নিতে প্রাণ হারানো চট্টগ্রামের হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের মো. আনিস (৩৫) ও মাসুদ কায়ছারের (৩২) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকের সাগরে ডুবে থাকা এই পরিবারের কান্নার রোল যেন থামছেই না।

নিহত আনিসের মা, ৭০ বছর বয়সী সায়রা খাতুন, তার দুই নাতি-নাতনিকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন, “আমার পোয়া এলাকার মানুষের উপকার করত, গরিবদের সাহায্য করত, সুখে-দুঃখে সবার পাশে দাঁড়াত। যারা আমার পোয়ারে গুলি করে মাইরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।”
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১২ টার দিকে শিকারপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে আনিস ও মাসুদের বাড়িতে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, নিহত আনিস ও মাসুদ কায়ছার এলাকায় মাটি ভরাট এবং বালির ব্যবসা করতেন। তারা হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গণি চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আনিস ছিলেন শিকারপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আ.লীগের সম্পাদক, আর মাসুদ যুবলীগের সদস্য।

আনিসের স্ত্রী এনি আক্তার, কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেন, “একটি বৈঠকে গেছে, এটা জানতাম। সঙ্গে মাসুদও ছিল। কিন্তু কার সঙ্গে বৈঠক, কারা ছিল সেই বৈঠকে, এসবের কিছুই আমরা জানি না। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং কুরবানির ঈদের পর হওয়া মামলার প্রতিশোধ নিতে এভাবে নির্মমভাবে গুলি করে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”

নিহত মাসুদের মামা জসিম বলেন, “ছোটবেলায় মাসুদের মা মারা গেলে আমরা তাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসি। তার খালা ও মামিরা তাকে অনেক যত্ন করে লালন-পালন করেছেন। আমার ভাগিনা খুব ভালো ছেলে ছিল। তার মতো সৎ এবং ভালোমানুষ খুব কমই আছে। যারা তাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।”

নিহত মাসুদের নানী, ৮০ বছর বয়সী ছেনোয়ারা বেগম, শোকের ভারে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। নাতির এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা শোকের সাগরে ভাসছেন।

শিকারপুর ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওমর জানিয়েছেন, শুক্রবার বাদ এশা নিহত আনিস ও মাসুদের জানাজা নামাজ শেষে তাদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। বর্তমানে এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) মহিউদ্দীন সুমন জানান, নিহত মাসুদের ভাই আরিফ বাদী হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আরেকটি মামলা বায়েজিদ থানায় দায়ের করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডে শিকারপুরের আকাশে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামজুড়ে কান্নার রোল, শোকের মাতম আর বিচার চাওয়ার আর্জি যেন থামছেই না।