মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারী (চট্রগ্রাম) : হাটহাজারীতে সনাতনী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মন্দাকিনী মেলা ও পূর্ণ্য স্নান সম্পন্ন হয়েছে। হাজারো ভক্ত ও পূর্ণ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছিলো পুরো এলাকা। শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, কৃর্ত্তন ও ধর্মীয় আলোচনা সভা সহ নানা ধরণে কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে মহাসমারোহে বুধবার শান্তিপূর্নভাবে এ মেলা সম্পন্ন হয়।
জানা যায়, প্রতি বছর ন্যায় এ বছরও মধূ কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ মেলা ও স্নান অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে স্নান ও মেলা কমিটির পক্ষ থেকে দু’দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, ধর্মীয় পাল্টা কীর্ত্তন, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও পূর্ণ্য স্নান। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতিসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীর সমাগমে ঘটে। এতে করে মেলাস্থল মুখরিত হয় ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের পদচারণায়। তবে মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
সূর্য উদয়ের পর তিথি শুরু হলে পূর্ণার্থীরা মন্দাকিনি খালে পূর্ণ্য স্নান শেষ করে প্রয়াত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও জ্ঞ্যাতি-বর্গের উদ্যেশে মন্ত্র পাঠ করে পিন্ড দান করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলাস্থলে লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। সীতাকুন্ডের ব্যাসকুন্ডের পাহাড়ি জলধারা থেকে মন্দাকিনী খাল উৎপত্তি হয়ে পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী গ্রাম হয়ে হালদা নদীর সাথে মিশেছে। মন্দাকিনী খালটি এক স্রোতী। সারা বছর এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। হালদা নদীর সংযোগস্থলে অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথিতে নদীর জোয়ার বৃদ্ধি পেলে আংশিক জোয়ারের পানি খালে ঢুকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিশ্বাস করেন মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ খালে স্নান করতে পারলে মহাপূর্র্ণ্যের অধিকারী হওয়া যায়। এখানে অনুষ্ঠিত মেলায় সাংসারিক প্রয়োজনের যাবতীয় দ্রব্যাদিও পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় এসব দ্রব্যাদি ক্রয় করতেও অনেক লোকজন মেলায় আসে।
পার্বত্য এলাকা মানিকছড়ি থেকে আগত ষাটর্দ্ধো প্রিয়তুষ ত্রিপুরা জানান, মন্দাকিনী মেলা সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে মিলন মেলা। আমরা প্রতি বছর মেলার জন্য অপেক্ষা করি। মেলায় আগত পূর্ণার্থীরা জানান, মেলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে তারা খুব খুশি।
মেলা পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, মেলায় সর্ব সম্প্রদায়ের ভক্তদের আগমণ ঘটেছে। অস্বচ্ছল ও দরিদ্রস্থরা তাদের প্রয়াত মা-বাবার উদ্দ্যেশে পিন্ড-দান করতে এ তীর্থে আসেন। এছাড়া যারা পরকালে তাদের সুখ-শান্তির জন্য সুদুর ধর্মীয় গয়া কাশিতে গিয়ে তীর্থ করতে পারে না সেই সব ভক্তরা এখানে এই তীর্থে স্নান তর্পণ ও পিন্ড-দান করেন। এই মহাপুর্ণ্য তীথিতে অগণিত ভক্ত মন্দাকিনী এলাকায় সমাবেত হয় তর্পণ ও পূর্ণ্য স্নান করেন। তাছাড়া এবার মেলায় আগতদের জন্য মহাপ্রসাদ বিতরনের ব্যবস্হা করা হয়। প্রায় অর্ধলক্ষাধীক লোক মেলা সংলগ্ন স্হানে প্রসাদ গ্রহন করেন।
হাটহাজারী মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান. মন্দকিনী স্নানে ও মেলা নির্ভিগ্ন র্শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃংঙ্খলা বহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শাহিদুল আলম জানান, সনাতনী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মন্দাকিনী মেলা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এল//

Discussion about this post