দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গা বাজারের গোহাটা সংলগ্ন সামনা গ্রামের সিলন শেখের বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পরেও প্রতিবন্ধী সেজে তৎকালীন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিবন্ধী ভাতা ও মৃত বাবার পেনশন ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সিলন শেখের পিতা মৃত শওকত আলী সোনাইকুন্ডি তহসিল অফিসে সার্ভেয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ৮ই জানুয়ারী ভেড়ামারা সাতবাড়িয়া নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান শওকত আলী। তার মৃত্যুর পর খাজিমা খাতুন স্বামীর পেনশন ভাতা গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৭ সালের ৭জুলাই শওকত আলীর স্ত্রী খাজিমা খাতুন বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত শওকত আলী ও মৃত খাজিমা খাতুন দম্পতির ৭ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে সিলন শেখ ছয় নম্বর। বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পর সিলন শেখ সুস্থ মানুষ থেকে প্রতিবন্ধী সেজে তৎকালীন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়ে নেবার পর দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা ও মৃত বাবার পেনশন ভাতা উত্তোলন করে আসছে। ঘটনার তদন্তে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুস্থ ব্যক্তি সিলন শেখ। প্রতিবেদকের সামনে তাকে বারবার দৌড়ে এদিক-ওদিক যেতেও দেখা যায়। প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার ডান পায়ের একটা আঙ্গুলে একটু সমস্যা আছে। তাছাড়া তিনি এক ভাবে কাজ করতে গেলে মাঝে মাঝে জোর পান্না। ২/৩ বছর আগে তিনি হাসপাতলে ভর্তি হয়ে ৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারে। সেই সময় কাশেম নামের দৌলতপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আমাকে ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ এর প্রদত্ত তথ্য মতে, কোন কর্মচারীর প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তিনি চাকরিরত অবস্থায় কিংবা পেনশনভোগী অবস্থায় উক্ত প্রতিবন্ধী সন্তানের বিষয়ে দলিল-দস্তাবেজ সহ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। কর্মচারীর প্রতিবন্ধী সন্তান দৈহিক বা মানসিক অসামর্থের কারণে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন ও উপার্জনে অক্ষম মর্মে ‘খ’ উপ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র দাখিল করতে হবে। জেলা পর্যায়ে মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি সিভিল সার্জন, ? দৈহিক বা মানসিক অসামর্থের বিষয় সরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (সিভিল সার্জন কর্তৃক মনোনীত) সদস্য ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ দপ্তরের অফিস প্রধান/ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কল্যাণ কর্মকর্তা সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন। মেডিকেল বোর্ডের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তার আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষমতা ও উপার্জনে অক্ষমতার বিষয়টি তারা পরীক্ষা পূর্বক প্রত্যয়ন প্রদান করবেন। এ ধরনের নিয়ম কানুন থাকার পরও একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কিভাবে প্রতিবন্ধী সেজে প্রতিবন্ধী ভাতা ও তার মৃত বাবার পেনশন ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রশ্ন জনগণের???
বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও বর্তমান উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ফিল্ড সুপারভাইজার শিরিন সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সেই সময় কিভাবে যে প্রতিবন্ধী স্মার্ট কার্ড করে নিয়ে গেছে আমি কিভাবে বলবো। আমার কি মনে আছে! ওটা যে কিভাবে হয়েছে আমার তা জানা নাই।
এই বিষয়ে তৎকালীন দৌলতপুরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কাশেম ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ছানোয়ার আলীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বর্তমান দৌলতপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জাহিদুল আলমের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আপনারা যদি এ ধরনের সত্যগুলোকে উন্মোচন করতে পারেন তাহলে সেটা দেশের জন্য ও রাষ্ট্রের জন্য ভালো হয়। ডাটার অভাবে এই ধরনের সমস্যা গুলো আমরা ধরতে পারছিনা। আমাদের কাছে এই ধরনের ইনফরমেশন আসলে অবশ্যই আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে এই ভাতা নিয়ে যাচ্ছে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Discussion about this post