অসভ্য দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলকে ধ্বংস করে নিজেদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিতে ফিলিস্তিনে গড়ে ওঠে বেশ কিছু দল। যাদের প্রায় সবগুলোতেই আবার গড়ে উঠেছে সশস্ত্র শাখা। সবার উদ্দেশ্য একটাই ইসরাইলের দমন-পীড়ন-অত্যাচার ও মানচিত্রখেকো আগ্রাসন থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করা। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে।
হিজবুল্লাহ : লেবানন ভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থী একটি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হলো হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের কাছে হিজবুল্লাহ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
তাদের হাতে রকেট রয়েছে দুই লাখের মতো। সেনার সংখ্যা লক্ষাধিক। আর দেড় থেকে দুই লাখ রকেটসহ মর্টার, গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তাদের। হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে থাকা রকেটগুলো বিভিন্ন পাল্লার। ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার (স্বল্পপাল্লা) দূরের ৪০ হাজার, ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম (মাঝারি পাল্লা) ৮০ হাজার এবং ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার (দূরপাল্লা) দূরে আঘাত করার উপযোগী ৩০ হাজার রকেট রয়েছে এই বাহিনীর।
হুতিঃ ইয়েমেনী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক ও সশস্ত্র আন্দোলন হলো নেতৃত্ব মূলত হুথি উপজাতি থেকে নেওয়া হয়। হুসাইন বদর উদ্দিন আল-হুথির নেতৃত্বে দলটি ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের বিরোধী হিসেবে প্রথম আবির্ভূত হয়।
প্রায় ১৪০০ মাইল দূর থেকেই ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আলোচনায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। সম্প্রতি ইহুদিদের ভূখণ্ডে ব্যালেস্টিক মিসাইল আর ড্রোন ছুড়ে নিজেদের সামরিক সক্ষমতার জানান দিয়েছে সংগঠনটি।
ইরানের তৈরি কিয়াম ওয়ান ও টু, ফাতেহ- ওয়ান ওয়ান জিরো ও খাইবারের মতো ব্যালেস্টিক মিসাইল মালিক হুতিরা। তাদের আছে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য বেশকয়েক ধরনের ক্রুজ মিসাইল।
আকাশপথেও শক্তিশালী হুতিরা। আবাবিল, সামাদ, শিহাব, শাহেদের মতো আত্মঘাতী ড্রোন তো আছেই আরও আছে মেরসাদ ওয়ান ও টু নামের চালকবিহীন যুদ্ধযান।
ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড : ফিলিস্তিনের ইজ আল-দিন কাসেম নামক একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারকের নামানুসারে এই দলটির নামকরণ। ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দলটি গঠন করা হয়। ইসরাইলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন করা ও ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় বড় অভিযান পরিচালনা করে। এটিকে গাজার প্রথম বৃহত্তম সশস্ত্র দল হিসাবে অভিহিত করা হয়।
আল-কুদস ব্রিগেড : আল-কুদস ব্রিগেড (একিউবি) ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সশস্ত্র শাখা। হামাসের ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের (আইকিউবি) পর এটিই গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র মুক্তিকামী দল। পশ্চিম তীরেও দলটির ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৫ সালে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ফাথি আল-শিকাকিকে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করে। এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় বেশ কয়েকটি যুদ্ধে লড়াই করেছে।
আল-নাসির সালিহ আল-দীন :গাজার সশস্ত্র বাহিনীর গ্রুপ পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটির (পিআরসি) সশস্ত্র শাখা আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড। আল-দীন গাজায় তৃতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র দল। পিআরসি তারা হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) শক্তিশালী মিত্র।
আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড :আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড (এএমবি) ফিলিস্তিনের নেতৃত্বাস্থানীয় দল ফাতাহর সশস্ত্র শাখা। ২০০০ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে গঠিত হয়েছিল।
তুলকারম ব্রিগেড :ফিলিস্তিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর মোকাবিলায় তুলকারম ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাজ করে। অন্যান্য মুক্তিকামী দলের মতো তাদেরও লক্ষ্য ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিকে রক্ষা করা।
লায়ন্স ডেন :
পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনির নতুন এ মুক্তিকামী সংগঠনটি ইসরাইলের আরেক ত্রাস। পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে দলটির মূল ঘাঁটি।
আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেডস : আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেড ফিলিস্তিনের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) বাহিনীর সশস্ত্র শাখা। তারা পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে।
ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড :ফিলিস্তিনের ডিএফএলপি বাহিনীর সামরিক শাখাটি চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে যোগ দিয়েছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড। দলের একমাত্র লক্ষ্য ইসরাইলের ধ্বংস। চলমান যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে দলটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//