মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ
হাটহাজারীর হালদা নদীন পাড়ে বহুল প্রতীক্ষিত ডিম থেকে এখন রেনু পোটানোর উৎসব চলছে।
এর আগে গত রবিবার মধ্য রাতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ)বহুল প্রতিক্ষিত ডিম ছাড়লে সোমবার সকাল পর্যন্ত তা সংগ্রহ করে শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।
জানা যায়, গত শনিবার সকাল থেকে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ শুরু হলে নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই দিন বিকাল থেকে কার্পজাতীয় মা মাছ নদীর রামদাস মুন্সির হাট, মাছুয়াঘোনা, আমতুয়া ও নয়াহাট এলাকায় সামান্য পরিমাণ ডিমের নমুনা ছাড়ে। গত রবিবার সকাল থেকে জোয়ার ও ভাটার সময় সকালে বিকালে পুনরায় নদীতে মা মাছ ডিমের নমুনা ছাড়ে। রবিবার দিবাগত রাতে আমতুয়া আজিমারঘাট নাপিতেরঘাট মাছুয়াঘোনা খারিরমুখ, কুমারখালি ও পোড়াকপালির সুইস গেইট মাছুয়াঘোনা, কাগতিয়ারটেক, সিপাহিরঘাট, পাতাইজ্জ্যার টেক গড়দুয়ারা নয়াহাট, চেংখালী সুইস গেইট প্রভৃতি এলাকায় এই বছরের আমাবস্যা শেষ জো /তিথিতে পুরাদমে মা মাছ ডিম ছাড়ে।
এদিকে ডিম থেকে রেনু উৎপাদনের হ্যাচারি ও মাটির কুয়ার পরিমাণ কম থাকায় অনেক ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহ না করে নদী থেকে উঠে আসে। বিগত ২০২০ সালের পরে এবার সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীতে ২০২০ সালে ২শ ৮০টি নৌকায় ২৫ হাজার ৫শ ৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করে। ২০২১ সালে প্রায় ৩শ ৬০ জন ডিম আহরণকারী ২শ ৮০টি নৌকায় ৮ হাজার ৫ শ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিল। তাছাড়া ২০২২ সালে গত ৫/৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম (৬ শ কেজি) ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। বিগত দুই বছরের মধ্যে এবার ২০২৩ সালের গত রবিবার (১৮ জুন) দিবাগত রাতে সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান এবার ৩শ নৌকায় প্রায় সাড়ে নয়শ ডিম সংগ্রহকারী ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি ডিম আহরণ করেছে।
প্রকৃত ডিমের হিসাব নির্ধারণের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কমিটি আগামী শুত্রুবার যৌথসভা করে সংগৃহীত ডিমের প্রকৃত হিসাব নির্ধারণ করবে বলে জানান হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। সরকার নির্ধারিত সংস্থাগুলো হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, কৃষি বিদ্যালয়, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্য অধিদপ্তর। ডিম থেকে রেনু ফোটানোর জন্য চারটি সরকারি হ্যাচারি ও একটি বেসরকারি হ্যাচারি ৬৮টি মাটির কুয়া রয়েছে। কিন্তু এবার যে পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে তার তুলনায় এই হ্যাচারি ও কুয়া পর্যাপ্ত নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিদের্শনা অনুসারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশের তৎপরতা, হালদা নদীর জীব বৈচিত্র্য এবং মিঠা পানির ডলফিন রক্ষায় নানামুখী কার্যক্রম এবং নদী দূষণের ব্যাপার নিয়মিত অভিযান অব্যাহত ছিল। নদী থেকে মাছ চুরির ঘটনা সনাক্ত করতে মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত ৮টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপনও করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীন ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান, তিনি ২৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। এবার ডিমের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম আহরণকারীরা খুবই খুশি।
মাদার্শা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া জানান, গত ২ বছরের তুলনায় এবার ডিমের পরিমাণ অনেক বেশি। তিনি তার চারটি নৌকায় ১৫/১৬ বালতি ডিম পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের (সিসিপিসি) জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শফিকুল ইসলাম জানান, গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নদীর বিভিন্ন অংশে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। রাতের জোয়ারের নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। সে ডিম সোমবার সকাল পর্যন্ত আহরণ করে পরে হ্যাচারি বা মাটির কুয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়।
হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীর আমতুয়া, আজিমার ঘাট, নাপিতের ঘাটসহ নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে এবার।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শাহিদুল আলম জানান, হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে জানান, গত ২ বছরের তুলনায় এবার ডিমের পরিমাণ বেশি। আর নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর দুর্বল হয়ে পড়ে। যাতে কোনো সুযোগ সন্ধানী এসময়টাতে মা মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকটা গুরুত্ব দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হালদার রেনুর সাথে স্থানীয় হ্যাচারির রেনু মিশিয়ে কেউ যাতে ভেজাল সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//

Discussion about this post