Print Date & Time : 15 May 2025 Thursday 1:02 pm

হালদা নদী থেকে ফের ৫টি মৃত মাছ ও ডলফিন উদ্ধার

মো.আলাউদ্দীন, হাটহাজারীঃ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে রবিবারসহ গত এক সপ্তাহে পাঁচটি মৃত মা মাছ ও একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে।
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে পাঁচটি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু একটি অস্বাভাবিক ঘটনা মনে করছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।

রবিবার (৩০ জুন) নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট নামক এলাকা থেকে প্রায় ২০ কেজি ওজনের এ মৃত কাতলা মা মাছটি উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত ২২ জুন শনিবার হালদা নদীর রাউজান অংশের উরকিরচরের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকা থেকে ১০ কেজি ওজনের ১ টি মৃত কাতলা মা মাছ, গত মঙ্গলবার ২৫ জুন হালদা নদীর হাটহাজারী অংশের গড়দুয়ারা এলাকা থেকে ১ টি মৃত ডলফিন, গত বুধবার ২৬ জুন বেলা দুইটার দিকে রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকা থেকে ১ টি মৃত মা (রুই) মাছ, গত শুক্রবার ২৮ জুন সকালে

উপজেলার ১০ নং উত্তর মাদার্শার কুমারখালি ঘাটে এলাকা থেকে প্রায় ১৬ কেজি এবং কুমারখালী ঘাট সংলগ্ন সুলতানা বাপের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১০ কেজি ওজনের ২ টি মৃত কাতলা মা মাছ উদ্ধার করা হয়েছিলো।

হালদা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী দূষণের বর্তমান পরিবেশ থেকে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য হালদার শাখা খালে যেসকল কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেসব কারখানাগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরী।

চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড.মো.শফিকুল ইসলাম জানান, ইদানিং হালদায় মনুষ্যসৃষ্ঠ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে যা হালদা জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীতে বিগত দুই বছর পরে কয়েকদিনের মধ্যে পাঁচটি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরও একটি হতাশাজনক বিষয় বিগত ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে সামান্য পরিমাণে বেশি। নদীর শাখা খালসমূহের দূষণের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা এজন্য প্রাথমিকভাবে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিপর্যয় রোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদ্‌ঘাটন করার প্রতি গুরুত্বারুপও করেন তিনি।

এদিকে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হলদা নদী ও কর্ণফুলী নদী দূষণের উৎসসমসূহ চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর দপ্তর কর্তৃক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ২৩ জুন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদন, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও মতামত অত্র কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে রবিবার ৩০ জুন বেলা ১ টা এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত কমিটির শীর্ষস্থানে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের রিসার্চ অফিসার আশরাফ উদ্দিন জানান, তদন্ত সম্পন্ন হয়নি, ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ার ফেরদৌস বলেন, হালদা ও কর্ণফুলী দূষণের উৎস খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//