আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: লেবাননের বৈরুতে হিজবুল্লাহ সদরদপ্তরে ভয়াবহ বিমান হামলায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর সংবাদ সংস্থা রয়টার্স আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশিষ্ট বিশ্লেষকের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সাক্ষাতকার নিয়েছে।
হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহতের ঘটনায় চলমান সংঘাতের গতিপথ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হবে না। এই অঞ্চলের আরব রাজধানীগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কারণ, রক্ষণশীল আরব দেশগুলোর কোনটিই হিজবুল্লাহকে খুব একটা পছন্দ করে না।
রোজামেরি কেলানিক, মিডল ইস্ট প্রোগ্রামবিষয়ক পরিচালক, ডিফেন্স প্রায়োরিটিস:
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহতের ঘটনায় চলমান সংঘাতের গতিপথ মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হবে না। সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এমন সুপরিকল্পিত হামলা আদতে কখনোই সংগঠনের পতন ঘটায় না। পতন বিশেষত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় যখন সংগঠনটি হিজবুল্লাহর মতোই পুরোনো ও বিস্তৃত হয়। নাসরুল্লাহকে হত্যা করা এই সংঘাতের অবসানের জন্য বিজয়ের বিকল্প নয়।
‘নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কর্মপন্থায় কোন পরিবর্তন আনবে না। তবে এটি আরও রক্তপাত রোধে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে।
অধ্যাপক মেহরান কামরাভা, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, কাতার:
‘এই অঞ্চলের আরব রাজধানীগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া (শঙ্কা) দেখা গেছে। এক ধরনের আনন্দের অনুভূতি সেই সঙ্গে লুকানো আনন্দ। কারণ, রক্ষণশীল আরব দেশগুলোর কোনটিই হিজবুল্লাহকে খুব একটা পছন্দ করে না।
তেহরানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি যদি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিবেচিত হয়ে থাকেও তবুও তারা এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে না। তেহরানের ‘কৌশলগত ধৈর্য’ নামে একটি মতবাদ রয়েছে, যেখানে তারা দীর্ঘমেয়াদে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এবং আমি মনে করি সেই মতবাদ অব্যাহত থাকবে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়াবে না।’
আজিজ আলগাশিয়ান, সৌদি বিশ্লেষক, উপসাগরীয়-ইসরায়েল সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ:
‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরব এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে স্পষ্টতই কোনও ভালবাসা হারিয়ে যায়নি। তারা হিজবুল্লাহকে এই অঞ্চলে খুব বিপর্যয়কর মনে করে। … এর সঙ্গে বলা যায়, সৌদিরা স্বল্পমেয়াদী বা অদূরদর্শীভাবে চিন্তা করছে না। হ্যাঁ, তিনি (নাসরুল্লাহ) চলে যেতে পারেন, হ্যাঁ তিনি হয়তো নেই, তবে ভালোবাসা হারায়নি। রিয়াদ বাস্তবতার ভিত্তিতে চিন্তাভাবনা করছে, আবেগতাড়িত হয়ে নয়।
আব্দুল্লাহ বাবুদ, কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের অনাবাসিক স্কলার এবং ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি, জাপানের ইসলামিক এরিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান:
‘ইরান প্রতিক্রিয়া জানাবে কিনা এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ ইরান তার মাটিতে আরও অনেক স্পষ্ট আক্রমণ প্রতিহত করেছে। তবে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আমি মনে করি ইরান যে কোনও অবস্থায় এমনটি করা এড়াতে চাইবে। তারা বুঝে ফেলেছে যে নেতানিয়াহু তাদের (যুদ্ধে) জড়াতে চায়। এছাড়াও যুদ্ধের পরিধি বাড়িয়ে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য সংঘাত বা সম্মুখ যুদ্ধে নিয়ে যেতে চায় তেল আবিব।’

Discussion about this post