Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 12:13 pm

হেলপার থেকে সার্ভেয়ার মান্নান এখনো বহাল তবিয়তে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লার ট্রাকের হেলপার এখন সার্ভেয়ার হয়েই বনে গেছেন কোটিপতি।
আলোচিত সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ আত্মসাতসহ সনদ জালিয়াতি ও নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
মান্নান তৎকালিন আওয়ামী সরকারের ব্যাপক ক্ষমতা ব্যবহারসহ হানিফ আতার প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার নানা অনিয়ম চালিয়ে এখনও আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সার্ভেয়ার মান্নানের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকলেও অদৃশ্য এক কারণে এখনো পর্যন্ত হয়নি কোন মামলা। তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। সচেতন মহল দাবি করছে আওয়ামী নেতা খ্যাত সার্ভেয়ার মান্নান এতটাই লাইন-লবিংকরেছে যে, যার কারণে প্রশাসন সহ ছাত্রজনতার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সার্ভেয়ার মান্নানের বিরুদ্ধে যথাযথ যথা ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি র দাবি জানায়।
সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার নাগরিকদের জিম্মি ও অবৈধ সুবিধা দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার ও তার স্ত্রীর আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭২ লক্ষ ৩২ হাজার ২৪৮ টাকা ৮০ পয়সা সম্পদ অর্জনের কারনে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা এখনও তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান ময়লার গাড়ির হেলপার হিসেবে কুষ্টিয়া পৌরসভায় কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে চট্টগ্রামের অস্তিত্বহীন একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সার্ভেয়ারের কাগজপত্র দিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। এই নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এর পর থেকেই পৌরসভা এলাকার নাগরিকদের জমি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন অনিয়ম করে তিনি হয়ে উঠেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ১৯৯৭ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার রামবাবু থাকা অবস্থায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্ভেয়ারের পোস্ট সৃষ্টি করিয়ে জাল সনদের মাধ্যমে সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল মান্নান। চাকরিতে যোগদানের আগে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লার ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়চট্টগ্রাম থেকে জাল সার্ভেয়ারের সার্টিফিকেট এনে সার্ভেয়ার বনে যান মান্নান। পৌরসভার সার্ভেয়ার হওয়ার পর থেকেই তিনি ঘুরে বেড়ান বিলাসবহুল গাড়িতে। কুষ্টিয়ায় গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি, কুষ্টিয়া শহর ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন জমি। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। এছাড়া স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়ির নামেও অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের তালিকাতে তার নাম নেই। ভুয়া সনদের কারনে আব্দুল মান্নান সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি করলেও মন্ত্রণালয়ের তালিকাতে তার নাম সার্ভেয়ার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কথিত সার্ভেয়ার পৌরসভায় নাগরিক সেবা নিতে আসা সেবা প্রত্যাশিদের সাথেও দূর্ব্যবহার করেন। গত ১৯ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার রামচন্দ্র রায় সড়ক এলাকার ফয়সাল ইকবাল খানের ছেলে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. ইসমাঈল ইকবাল খান কুষ্টিয়া পৌরসভা এলাকার তার নিজের বাড়ি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য পৌরস-ভায় একটি অভিযোগ জমা দেন। এর পর গত ২৩ মার্চ জমা দেওয়া অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে পৌরসভার সার্ভেয়ার আবুল মান্নানের কাছে গেলাম আব্দুল মান্নান তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং অভিযোগ না শুনেই অভিযোগ বাতিল করার কথা বলেন। পরবর্তীতে ওই অভিযোগকারী সমাধান চাইলে মান্নান অপারগতা প্রকাশ করেন।
এর প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী সেনাকর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. ইসমাঈল ইকবাল খান কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রশাসকের কাছে গত ১০ এপ্রিল প্রতিকার চেয়ে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। শুধু দুর্ব্যবহার করেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি মান্নান গত ৪ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনে লাঠি হাতে ছাত্র-জনতারওপর হামলা চালায়। পরে দুপুরের পুলিশ ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে কাদানি গ্যাস ও গুলি বর্ষন করলে ছাত্র-জনতাপুলিশের গুলি আর কাদানি গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে পৌরসভার দিকে গেলে আব্দুল মান্নান দলবলসহ অসহায় ছাত্র-জনতাকে ধাওয়া করে এবং মারপিট করে। এ ঘটনায় আন্দোলনকারী নাঈম জানান, আমরা পুলিশের গুলি থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য পৌরসভার কাছাকাছি পৌঁছালে সার্ভেয়ার মান্নান তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমন করে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। এ বিষয়ে জানতে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।