কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ১৩শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ আগষ্টে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা
ষড়যন্ত্র ও হয়রানি মূলক মামলার প্রতিবাদ এবং নি:শর্তে এই মামলা প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে।
এতে রাস্তার
উভয়পার্শ্বের প্রায় ৫ কিমি: দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় সীমাহিন জনদুর্ভোগের মুখে পড়ে পরিবহনের যাত্রী সাধারণ। তবে এসময়ের মধ্যে কোন ট্রেন ঘটনাস্থল অতিক্রম করতে না
আসায় কোন ট্রেন আটকা পড়েনি। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো- জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এসে মামলা প্রত্যাহার ঘোষনা দিলে তারা কর্মসূচী প্রত্যাহার করবেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সারা না পেয়ে সীমাহিন জনদুর্ভোগের কথা ভেবে
শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচী ঘোষনা করে সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করে। পরে দুপুর ১টায় মজমপুর রেলগেট ফেলে দিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা ও
কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে রাস্তায় অবস্থান গ্রহন করেন।
গতকালের বিক্ষোভ ও মানব বন্ধনে শিক্ষকদের অংশগ্রহন দেখা না গেলেও সোমবারের কর্মসূচীতে সকল শিক্ষক সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।
শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘কে বা কারা এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন তাদের খোঁজা হচ্ছে। সম্পৃক্ততার প্রমান পেলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রাজনীতির হীন চক্রান্তে একটি কু-চক্রী মহল পুলিশের সাথে যোগসাজসে মামলাবাজির ব্যবসা করতেই এই মিথ্যা ও বানোয়াট
মামলা দায়ের করেছে। এতে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করা হচ্ছে। তারা কলেজ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে শিক্ষা মনোরম পরিবেশ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রয়েছে। অবিলম্বে ষড়যন্ত্র ও হয়রানি মূলক মামলার এজাহার নামীয় ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা মামলার নি:শর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। নচেৎ এঘটনার প্রতিবাদ এবং দাবি আদায়ের জন্য
লাগাতার ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচী গ্রহন করা হবে বলে হুশিয়ারি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারী, কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জান মোহাম্মদ জানু শেখের ছেলে শেখ সবুজ রহমান(৪০) নামের ব্যক্তি গত ৫ আগষ্ট সাড়ে ৩টার সময় শহরের কোর্টপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শরীরের ৩০টি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া এই গুলিবর্ষণের হুকুম দাতা হিসেবে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ১৩ জন কলেজ শিক্ষকসহ মোট ২১ জনের
নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে বাদি সবুজ রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জেরিনের অভিযোগ, ‘কোথাকার কোন হোটেল বয় এই মামলার বাদি, যার সাথে আমাদের বা আমাদের স্যারদের কোন পরিচয় বা চেনা জানা নাই, অথচ তাকে কি করে স্যারেরা হত্যার
হুকুম দিলো ? অপর এক শিক্ষার্থী পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের হাবিবুর রহমান বলেন,‘মামলার এজাহার দেখলেই বোঝা যায় যে এটা একটা হাস্যকর মামলা। উদ্দেশ্য মূলক ভাবে স্যারদের সম্মানহানি ও হয়রানি মুখে ফেলে মোটা অংকের টাকা আদায়ের জন্যেই এই মামলা করানো হয়েছে’।
কুষ্টিয়ায় পুলিশের যোগাসাজসে একটি কু-চক্রীমহল ৫ আগষ্টের
স্পর্শকাতর ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মামলার আসামীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার মামলা বানিজ্য করে যাচ্ছে’।
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মোল্লা মো: রুহুল আমীন বলেন, ‘মামলাটির মোটিভ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এখানে একটি মহলের প্রত্যক্ষ ইন্দন রয়েছে। একটি কু-চক্রী মহলের হীণ স্বার্থে এই নিন্দনীয় কাজটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কান্ডজ্ঞানহীন অদুরদর্শীতার কারনে হয়েছে। কলেজের ভাবমুর্তি ও শিক্ষা মনোরম পরিবেশ রক্ষা স্বার্থে এর একটা সুরাহার দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের। একই সাথে এজাতীয় নিন্দনীয় কাজে যারা
জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন কলেজ অধ্যক্ষ।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, ‘কারো বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তারা সংক্ষুব্ধ হতেই পারেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি আমরা খুব সতর্কতার সাথে দেখছি। পুলিশ চাইলে এক্ষেত্রে অবশ্যই একটা সুন্দর সমাধানে যাবেন। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি’।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান জানান, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নাই। মামলা হয়েছে এটা আদালতের বিষয়, আদালত থেকেই এর সুরাহা হতে হবে’।

Discussion about this post