বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নামে ভুয়া এফডিআর (স্থায়ী আমানত) খুলে এবং এর বিপরীতে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৯ বছর পর ব্যাংক ম্যানেজারসহ তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুনশী আবদুল মজিদের আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় তিন আসামিই পলাতক ছিল। ১৯৯৩ সালে মামলাটি দায়ের করেছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে আদালতে মামলাটি পরিচালনা করা হয়।
দণ্ডিতরা হলেন— বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদের চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শাহেদ হাসান, তার স্ত্রী রেজিয়া সুলতানা এবং কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার মীর কাশেম।
দণ্ডিত শাহেদ হাসান কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার বাগানবাড়ি ঠাকুরপাড়া পান্থ নিবাস এলাকার মৃত মো. ইব্রাহিম মজুমদারের ছেলে এবং মীর কাশেম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানাধীন কাঞ্চননগর গ্রামের মৌলানা সৈয়দ মিয়ার ছেলে। রায়ে শাহেদ হাসানকে ১৭ বছর কারাদণ্ড, ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রেজিয়া সুলতানাকে বিভিন্ন ধারায় ৮ বছর কারাদণ্ড, এক কোটি ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, মীর কাশেমকে ৯ বছর কারাদণ্ড, এক কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর ৯ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মামলায় দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, বিপিসির নামে ভুয়া এফডিআর খুলে এর বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তিনজনকে খালাস দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত তিনজন পলাতক থাকলেও অভিযোগপত্রের আসামি একেএম নাজিম উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত রায়ে তাকেসহ পলাতক আরও দুইজনকে খালাস দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে— ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চা বোর্ড শাখায় বিপিসির নামে ভুয়া এফডিআর খুলে তার বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে পরস্পর যোগসাজসে ফিস হোম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে ট্রান্সফার দেখানো হয়। পরে বিপিসির অনুকূলে ক্রেডিট দেখিয়ে নিজেরাই বিপিসির নামে চেক বই তুলেন। পরে সেই চেকে বিপিসির কর্মকর্তাদের জাল সই দিয়ে চেক তুলে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাৎ করেন। এতে ব্যাংকটির ম্যানেজার, তার স্ত্রী, প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ অনেকে জড়িত ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাংকটির পরবর্তী ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির পরিদর্শক মো. আবদুল খালেক ওই মামলায় ৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০০০ সালের ২৯ মার্চ মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। পরে বিচারে ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলা চলাকালে তিন আসামির মৃত্যু হয়।
বা//দৈনিক দেশতথ্য// ১০ নভেম্বর ২০২২//