শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা):
পরকীয়াশক্ত স্ত্রী জয়ার আত্নহত্যার ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ন স্বামী আনন্দ তিন জনকে হত্যার টার্গেট নিয়েই নির্মমভাবে হত্যা করে অনুপকে। তবে চৌকস
পুলিশের নিখুঁত তদন্ত ঘটনার পরের দিনই হত্যার মোটিভ উদ্ঘাটনের একেবারেই
কাছাকাছি পৌছে দেয়। থানা পুলিশের পারিবারিক জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি আঁচ করে হন্তারক হিসেবে আনন্দকে চিহ্নিত করে তাকে নজরদারিতে রেখে পরিস্থিতি বুঝে সামনের দিকে এগোয় পুলিশ। এরপর ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই নিজ এলাকা থেকে আটক করে আনন্দকে।
এরপর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার জেরে অনুপকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে নেয় সে। এরপর হত্যায় ব্যবহৃত ফলকাটা ছুরির সন্ধান দেয় সে। দেখানো তথ্যমতে পুলিশ পার্শ্ববর্তী
ফুলবাড়িয়া গেটের খাল থেকে ছুরিটি উদ্ধার ও আলামত হিসেবে জব্দ করে। তবে
প্রথম হত্যায় ধরা খেয়ে ট্রিপল মার্ডারের লক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারেনি আনন্দ এজন্য আক্ষেপও রয়েছে তার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমন তথ্যও নিশ্চিত করে সে।
জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে অনুপকে হত্যার পর সময় পেলে অতি দ্রুত সে স্থানীয় আরো ২ জনকে হত্যার পর নিজেও আত্নহত্যা করতে চেয়েছিল সে। যদিও তার
পরিকল্পনায় শুরুতেই বাধ সাধে পুলিশ। স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসার পরও তার একাধিক পুরুষের সাথে পরকীয়া ও বিষয়টি বুঝতে পেরে স্ত্রী জয়ার সাথে
অশান্তি-ঝগড়ায় উপায়ন্তু না পেয়ে প্রায় মাস তিনেক আগে আত্নহত্যা করে বসে স্ত্রী জয়া। যা, স্বামী আনন্দকে আরোও গভীরভাবে পীড়া দেয়। আনন্দ নিজেকে
প্রস্তুত করে অনুপসহ অন্তত তিনজনকে নিজ হাতে হত্যার পর নিজেও আত্নহত্যা করবেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমন সব
লোমহর্ষক তথ্য।
এর আগে ২৬ জুন (সোমবার) সকালে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়ার অনুকুল মন্ডলের ছেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনুপ মন্ডল (২৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়
।
খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট শেষে
ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরিবারসহ আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে ঐদিনই
ব্যাপকভাবে কথাবার্তা ও জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে হত্যার ক্লু উদ্ঘাটনে
তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন থানার নবাগত পুলিশ কর্মকতা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
শুরুতেই পার্শ্ববর্তী নির্মল মন্ডলের ছেলে আনন্দ মন্ডলের স্ত্রী জয়ার
সাথে নিহত অনুপের পরকীয়া প্রেমের তথ্য পায় পুলিশ। এরপর ঘটনায় পারিবারিক
অশান্তির কারণে মাস তিনেক পূর্বে জয়ার আত্নহত্যার ঘটনাটিকে সর্বশেষ অনুপ হত্যার ক্লু হিসেবে দারুণভাবে নাড়া দেয়।
মূহুর্তে বেশ নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনায় নিহতের পিতা অনুকুল মন্ডল বাদী হয়ে
অজ্ঞাত আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৭ জুন
বিকেল আনুমানিক ৫ টার দিকে নিজ এলাকা থেকে পুলিশ আনন্দ মন্ডলকে প্রথমত
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। শুরুতেই হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে বিস্তারিত খুলে বলে পুলিশকে।
লোমহর্ষক বর্ণনায় অনুপকে আগের দিন রবিবার রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে বাড়ির পাশে ভিটায় ডেকে নিয়ে প্রথমে গেঞ্জি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা ও পরে
ফলকাটা ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এছাড়া সে আরো ২ জনকে হত্যার পর নিজে আত্নহত্যার টার্গেট করে। তবে পরবর্তী টার্গেটে ঠিক কারা ছিল তা পুলিশ অধিকতর তদন্তের জন্য গোপন রেখেছে।
সর্বশেষ আনন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
শেষে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য// এইচ//

Discussion about this post