ইঞ্জিন নৌকা ৫, ফাইবার ও ছোট ট্রলার ৮ মাঝারি ও বড় সাইজের ট্রলার প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে দেয়া হচ্ছে মাছ শিকারের সুযোগ। নিউজ ঠেকাতে প্রভাবশালী কিছু সাংবাদিক ও তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে আড়ৎ মালিক সিন্ডিকেট।
অবৈধ লেনদেনের জোরে ইলিশ রক্ষায় জারী করা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন নেই কলাপাড়া, কুয়াকাটা উপকূলে। যার ফলে এবারে ইলিশ সহ প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন মারাত্বকভাবে হ্রাস পাবে। এমনই আভাস দিয়েছেন শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’র ফিশারিজ অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।
ইলিশ প্রজনন মৌসুমে কর্মবিমূখ হয়ে পড়া জেলেদের বিশেষ সহায়তার চাল দেয়ার পরও উপকূলের অসংখ্য ছোট ইঞ্জিন নৌকা, ফাইবার ট্রলার এবং গভীর সমুদ্রগামী মাঝারি ও বড় সাইজের মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্রে মাছ শিকার করছে।
একশ্রেনীর অসাধু মৎস্য আড়ৎ মালিকরা সিন্ডিকেট করে কোটি টাকার লেনদেনে তাদের আড়তে মাছ সরবরাহকারী জেলেদের অবৈধ এ সুযোগ করে দিয়েছে। তারা অভিযুক্ত জেলেদের সাথে আহরিত মাছ দিয়ে সমন্বয় করছেন।
এতে দেশের মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন অসাধু আড়ৎ মালিক সহ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা। যেসব জেলে আড়ৎ মালিকের সুবিধাভোগী তালিকায় নেই তারা কেউ মাছ ধরলে কেবল তাদের উপর প্রয়োগ হচ্ছে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ আইনের খড়গ, এমন অভিযোগ একাধিক নির্ভর যোগ্য সূত্রের।
সূত্র জানায়, সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সকল ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এসময় কর্মবিমূখ হয়ে পড়া জেলেদের প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি করে মানবিক সহায়তার চাল দিলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার যেন কিছুতেই থামছেনা। চালু রয়েছে কলাপাড়া, কুয়াকাটা উপকূলের বেশ কিছু বরফকল। যারা ম্যানেজ করে চলছে তারা আইনের খড়গের কবলে পড়ছেনা, তাদের কাছে অভিযানের তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে অভিযানের আগে। অসাধু জেলেদের সাথে নৌ-পুলিশের এমন গোপন সখ্যতার অভিযোগে বদলী করা হয় কুয়াকাটা নৌ-পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শ্বেদকে।
এছাড়া কুয়াকাটা উপকূলের ধোলাই মার্কেটে মৎস্য বিভাগের মেরিন কর্মকর্তা আশিকুর রহমান কোষ্ট গার্ড সদস্যদের নিয়ে তার গুডবুকে না থাকায় একটি বন্ধ মাছের আড়তের শাটার ভেঙ্গে অভিযান চালালে প্রতিবাদ করেন মহিপুর থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি হারুন তালুকদার। যা বাক বিতন্ডায় রুপ নিলে দফারফা শেষে জনতার চোখ এড়াতে নামমাত্র জব্দকৃত মাছ ১ হাজার টাকা নিলামে বিক্রী করে টাকা জমা দেয়া হয় সরকারী কোষাগারে। এভাবেই বাবলাতলা, চাপলি, ধোলাইমার্কেট, গঙ্গামতি, ঢোস, বালিয়াতলী, আশাখালী, কুয়াকাটা, মহিপুর-আলীপুর মৎস্যবন্দর থেকে আহরিত মাছ প্রকাশ্যে নৌ ও সড়ক পথে বিক্রীর জন্য চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
জেলেদের দাবি, ৫-৭ সদস্যের পরিবারে সরকারের দেয়া চাল দিয়ে তাদের কিছুই হয় না। চাল বাদে অন্য নিত্য পণ্যগুলো কিনতে টাকার প্রয়োজন। এজন্য আড়তদারদের কাছ থেকে তাদের দাদন নিতে হয়। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার এ সময় বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম ও ভোলার জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরছে। বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে ভারতের জেলেরাও প্রতিনিয়ত মাছ ধরছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা উপকূলের ইঞ্জিন নৌকা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা, ফাইবার ও ছোট ট্রলার প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা এবং মাঝারি ও বড় সাইজের ট্রলার প্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সমুদ্রে নির্বিঘেœ মাছ শিকারের নেপথ্যে মদদ দিচ্ছেন আড়ৎ মালিক সিন্ডিকেট। যাতে নদী, সমুদ্র ও সমুদ্র মোহনায় দেড় ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ফাঁসের ডান্ডি মাছের জাল, তিন ইঞ্চি বাই সাড়ে তিন ইঞ্চি ফাঁসের ইলিশ জাল ও হাফ ইঞ্চি বাই হাফ ইঞ্চি চিংড়ি মাছ শিকারের জাল ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করতে পারে জেলেরা। আর এসব তথ্য যাতে গনমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে না পড়ে এজন্য প্রভাবশালী কিছু সাংবাদিক ও তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন আড়ৎ মালিক সিন্ডিকেট।
আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়ম হলেও সবাই দোষী নন। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা আমাদের জেলেরা মানলেও ভারতের জেলেরা মানছেন না। এ কারণে নিষেধাজ্ঞার সুফল আসছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সাগরে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে সুযোগসন্ধানী কিছু জেলেরা মাছ শিকার করছেন। তাদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে।
শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’র ফিশারিজ অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, মুষ্টিমেয় মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী ও জেলেদের কারণে সরকারের মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি সফল হচ্ছেনা। প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধিসহ মাছের উৎপাদন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এসময় মাছ শিকার করা মানে মাছের বংশ ধ্বংস করা। এটা
দেশের স্বার্থে সবাইকে বুঝতে হবে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৭ জুলাই ২০২৩

Discussion about this post