শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ধরলা সেতু সংলগ্ন পুলিশ চেক বক্সে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে নেই পানির ব্যবস্থা । অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে চেকবক্স এলাকায় নিরাপত্তায় ব্যবহারকৃত ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাগুলি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের জন্য ব্যবহার করা সৌচাগারও দীর্ঘ ৬ মাস ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী।
এছাড়াও পাশের একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় বিদ্যূৎ সংযোগ চললেও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে নেই কোন উদ্যোগ। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই চেকপোস্টটি এভাবে পড়ে থাকলেও এসব মেরামতে টনক নড়েনি জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষের।
চেকপোস্টের সামনে ভেঙে পড়ে আছে পুলিশ চেকপোস্টের ব্যারিকেড দেয়ার যন্ত্রটি। আশ-পাশে লাগানো সচেতনতামুলক বিলবোর্ডগুলোও উধাও। ভ্যাপসা গরমে চেকপোস্টের ভিতরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান,দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ এর লাইনে সমস্যার কারণে পানির পাম্প চালু করলেও পানি উঠে না। খাবার পানিসহ প্রয়োজনী কাজের জন্য বাইরের চায়ের দোকান থেকে ঘন ঘন জগ ভর্তি করে পানি এনে রাখতে হয়। এছাড়াও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ১২ ঘন্টার ডিউটিতে তাদের কয়েকবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুল থানায় গিয়ে কাজ সারতে হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধমূলক কাজের অভিযান বা তল্লাশিতে বিঘ্ন ঘটে।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা ধরলা সেতু এলাকায় মাদক কেনা-বেচা, ইভিটিজিং ও ছিনতাই রোধে,দূর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে এবং সীমান্ত থেকে অবৈধ চোরাচালান বন্ধসহ
নিরাপত্তার স্বার্থে এই পুলিশ চেকপোস্টটি নির্মাণ করেন। সে সময় এর আশ-পাশের নিরাপত্তার জন্য ৪টি ক্লোজ সার্কিট(সিসি) ক্যামেরাও বসানো হয়। এরপর আপরাধ দমনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই পুলিশ চেকপোস্টটি।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের সময় এই চেক পোস্টটি থেকে বসার চেয়ার,টেবিল,আসবাবপত্র লুটপাট করে ভাঙচুর করা হলেও সেইভাবে পড়ে আছে জন-নিরাপত্তার স্বার্থে নির্মিত এই পুলিশ চেকপোস্টটি।
এছাড়াও ২০২১ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ পাশের একটি দোকান থেকে নেয়া হলেও সেই বিল পরিশোধেও গরিমসি দেখা যায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় আরেকটি দোকান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হলেও সেই বিল পরিশোধেও নেই কোন উদ্যোগ।
বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত এই চেক পোস্টটিতে ৫ জন করে পুলিশ সদস্য প্রতিদিন ১২ ঘন্টা পর পর ২৪ ঘন্টায় ডিউটি করছেন।
চেক পোস্টের পাশের চায়ের দোকানদার মো.কাওসার বলেন,’যখন চেকপোস্টটা চালু করে,তখন থাকি আলাদা করে কারেন্টের কোন মিটার লাগানো হয়নি। আমার অনেক বিল বকেয়া ছিলো,অনেক ঘুরছি ঠিক মত বিল পাইনি। পরে অনেক কষ্টে কিছু টাকা পাবার পর লাইন কাটি দিছি।’
পাশের আরেক ব্যবসায়ী মো. বিদ্যুৎ বলেন,’ ৫ মাস হলো আমার দোকান থাকি কারেন্টের লাইন দিছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারেন্টের বিলের টাকা দেয়নি। টাকা চাইলে বলে স্যারের সাথে দেখা করো। আমরা ব্যবসা ছাড়ি ভয়ে টাকা চাইতে যাইতে পারি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন,’রাতের বেলা ডিউটি করতে খুব কষ্ট হয়। রাতে ঠিকমতো তল্লাসি করা যায় না। সিসি ক্যামেরাগুলি নষ্ট হয়ে ঝুলে পড়ে আছে। স্যারদের অনেকবার বলা হইছে । কোন লাভ হয়নি।’
পুলিশ চেক-পোস্টটিতে নিয়োজিত ইনচার্জ মো.নওশাদ আলী বলেন,’বর্তমানে বিদ্যুৎ এর সমস্যার কারণে সিসি ক্যামেরাগুলি চালু নাই। পানি নাই ৬ মাস থাকি । আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি ,হয়তো বাজেট আসলে সব মেরামত করবে।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো.হাবিবুল্লাহ বলেন,’ ধরলা সেতুর চেক-পোস্টটি কিশোর অপরাধ দমনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানির সমস্যা ও সিসি ক্যামেরা সমস্যাগুলো নিয়ে আমি এসপি স্যারের সাথে কথা বলবো।’
জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার মো.বজলার রহমান বলেন,’বিষয়গুলো আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। আমরা দ্রুত এগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।’